সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার ১২ থানা এলাকার প্রায় সব কয়টি সড়কে নিয়মিত চলাচল করছে প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশী অবৈধ মোটরযান। এই তথ্য বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, কেবল সুনামগঞ্জ শহরেই প্রতিদিন চলাচল করছে প্রায় ২ হাজার অবৈধ মোটরযান। এরমধ্যে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, হিউম্যান হলার (লেগুনা), কার ও মাইক্রোবাস (লাইটএস) এবং মোটরসাইকেলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। নিয়মিত বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারি সিএনজি অটোরিকশার প্রায় অর্ধেকরই নেই বৈধ কাগজপত্র। নেই চালকের লাইসেন্স। ফিটনেসের দিক থেকে সিএনজি তুলনামূলক ভালো থাকলেও সবচেয়ে লক্করঝক্কর অবস্থা হিউম্যান হলার (লেগুনা) গুলোর। অধিকাংশ লেগুনাতেই নেই লুকিং গ্লাস ও যাত্রীদের কাঙ্খিত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা।
জেলা শহরের লেগুনা ও সিএনজি অটোরিকশা সমিতির তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতিদিন এসব গণ-পরিবহন চলাচল করছে জেলার জামালগঞ্জ, দিরাই, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, দাক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে। এসব পরিবহন পরিচালনা করছেন আলাদা আলাদা উপজেলার ভিন্ন ভিন্ন সমিতির নেতারা।
শহরের পুরাতন বাস স্টেশন এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার মালিক ও শ্রমিক সমিতির নিয়ন্ত্রণে ২ হাজারেরও বেশী সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অবশ্য সমিতির নেতারা দাবি করেছেন ১ হাজার ৫০০ টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব যানবাহনের বড় একটি অংশেরই নেই বৈধ কাগজ ও চালকদের লাইসেন্স। অন্যদিকে, শহর থেকে সিলেটে চলাচলকারি মাইক্রোবাস (লাইটএস) ও কারসহ বিভিন্ন মডেলের গণপরিবহনগুলোর বড় একটি অংশের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে নবায়নের উদ্যোগ নেই মালিকপক্ষের। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অব্দি সব ধরণের মোটরযানের বৈধ কাগজ হালনাগাদের শেষ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চালকদের
লাইসেন্স পাওয়া নিয়েও রয়েছে বিস্তর জটিলতা।
জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সিলেট ও ছাতকে চলাচলকারী ৪০০টি বাসের মধ্যে বৈধ কাগজ রয়েছে মাত্র ২৬টির। এর বাইরে থাকা বাসগুলো বছরের পর বছর ধরেই চলছে অবৈধভাবে। বার বার তাগিদ দেয়ার পরও মালিকদের উদাসীনতায় বৈধতা মিলছে না এসব গণপরিবহনের।
সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় চলাচলকারি প্রায় ৮ হাজারেরও বেশী সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৩শ’টির কাগজপত্রের বৈধতা রয়েছে। এর বাইরেও জেলায় চলাচলকারি ৫শ’টিরও বেশী হিউম্যান হলার (লেগুনা)’র মধ্যে মাত্র ২৮১ টির বৈধ কাগজ পাওয়া গেছে।
১১ উপজেলা ও ১২ থানা এলাকার সড়কে নিয়মিত চলাচলকারি প্রায় ২০ হাজার মোটরসাইকেলের মধ্যে মাত্র ৬ হাজার ১৫০ টির কাগজের বৈধতা রয়েছে। বিআরটিএ’র তথ্যে সারা জেলায় পরিচালিত এতো সংখ্যক মোটরযানের মধ্যে চালকদের পেশাদার লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৫২ টি। অপেশাদার লাইসেন্সের সংখ্যা ২ হাজার ৯৩৯ টি।
বিআরটিএ সুনামগঞ্জ সার্কেল থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক, বর্তমানে ২১ হাজার ২৭১ টাকায় ১০ বছর মেয়াদে রেজিস্ট্রেশন অন্তর্র্ভূক্তি করা হচ্ছে ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল’এর। পাশাপাশি ১১ হাজার ৪৩৯ টাকায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা’র রেজিস্ট্রেশনসহ বৈধ কাগজ পাওয়া যাচ্ছে। হিউম্যান হলার বা লেগুনার রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে ২২ হাজার ২৫৫ টাকায়। আর মোটর ড্রাইভিং এর পেশাদার লাইসেন্স করতে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৭৯ টাকা এবং অপেশাদার ২ হাজার ৫৪২ টাকা।
অবৈধ মোটরযান চলাচল বিষয়ে শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুনু মিয়া বলেন, রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে জটিলতা রয়েছে জেনেই এই প্রক্রিয়ায় উৎসাহ কম মালিক-চালকদের। সিএনজি শো রুম থেকে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই অটোরিক্সা বিক্রি হচ্ছে, এটাও বন্ধ করা দরকার।
জেলা মাইক্রোবাস (লাইটএস) শ্রমিক সমিতির সভাপতি সুজাউল আহমদ বলেন, পুরাতন বাস স্টেশনে আমাদের সমিতির প্রায় ১শ কার-মাইক্রোবাস আছে। রেজিস্ট্রেশন বেশিরভাগ মালিক করেছিলেন। কিন্তু আর কখনো এসব নবায়ন করা হয়েছে কি না, তার খবর আমরা জানি না।
জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপের মহাসচিব মো. জুয়েল মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে প্রায় ৪’শ বাস চলাচল করে। কিছু সংখ্যক বাসের রেজিস্ট্রেশন আছে। আমরা সবাইকে বার বার আহবান জানাচ্ছি বৈধ কাগজপত্র নবায়ন করার জন্য। আমরা তাদেরকে চিঠি দিয়েও অবগত করেছি। মালিকরা দ্রুত সময়ে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
ট্রাফিক-পুলিশ বিভাগের ইন্সপেক্টর (সুনামগঞ্জ সদর) মো. শামসুল আলম বলেন, আমরা অবৈধ মোটরযান চলাচল বন্ধে নিয়মিত মামলা করছি। সকল মোটরযান পরিচালকদেরকে রেজিস্ট্রেশনসহ তাদের গাড়ি চালানোর জন্য আহবান জানাচ্ছি। আমরা আরও কঠোরভাবে এসব অবৈধ মোটরযান চলাচল বন্ধ করতে চেষ্টা করছি।
বিআরটিএ সুনামগঞ্জ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা চাইলেও আলাদা অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। আমাদের নিজস্ব কোন অভিযানিক দল নেই, ম্যাজিস্ট্রেট নেই, আমরা অবৈধ মোটরযান বিরোধী অভিযান করতে গেলে প্রশাসনের একজন সহকারি কমিশনার ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়, দিন তারিখ ঠিক করতে হয়। এজন্য চাইলেই নিয়মিত অভিযান করা সম্ভব নয়। আমরা কঠোরভাবে অবৈধ মোটরযান বিরোধী অভিযান শুরু করবো।