ব্রিটেনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশিদের আয়ের উৎস রেস্টুরেন্ট শিল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০২০, ১২:৫৫:১৪
ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের মূল ব্যবসা এখনও রেস্টুরেন্ট। দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় চার লাখই এই সেক্টরে সম্পৃক্ত। তবে, করোনা মহামারির মধ্যে দেশটির প্রায় সব এলাকার রেস্টুরেন্টেই তৈরি হয়েছে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। এই খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বলছেন, গত দেড় দশক ধরে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে টিকে থাকলেও মহামারির কালে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা রেস্টুরেন্ট শিল্প। গত কয়েক প্রজন্ম ধরে দেশটিতে ভারতীয় খাবার জনপ্রিয় করে তোলার মূল কারিগর তারাই। শুন্য দশক অবধি এই সেক্টরের শীর্ষস্থানের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশিদের হাতে। তবে গত দেড় দশকে জৌলুস হারিয়েছে বাংলাদেশিদের সেই নিয়ন্ত্রণ। দিনে দিনে খাবারের মান ও দামে টার্কিসসহ অন্যান্য খাবারের সাথে প্রতিযোগীতায় জৌলুস হারালেও কোনও রকমে টিকে থাকতে হয়েছে তাদের। এর মধ্যে বাড়তি দুর্গতি বয়ে এনেছে করোনা মহামারি।
দেড় দশক আগে রেস্টুরেন্ট সেক্টরে মন্দা শুরু হলেও বাংলাদেশিদের অপেক্ষাকৃত প্রবীণ একটি প্রজন্ম মাঝবয়সে পেশা পরিবর্তনের ঝুঁকি না এই সেক্টরে টিকে থাকবার চেষ্টা করছিলেন। মালিক, শেফ, কর্মী সবারই এ টিকে থাকার লড়াইটা করোনার প্রভাব পর্যদুস্থ করে তুলেছে।
ব্রিটেনের ক্বারী ক্যাপিটাল হিসেবে খ্যাত লন্ডনের ব্রিকলেইনের বাংলা টাউন। ১৯৭৪ সালে এখানকার ক্লিফটন রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে যাত্রা শুরু এখানকার বাংলাদেশি রেস্তোরা শিল্পের। এখন গত কয়েক বছর ধরে ব্রিকলেইন জুড়ে কেবল বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোর বন্ধ হবার হিড়িক।
রেস্টুরেন্ট সেক্টরে করোনাজনিত ভয়াবহ মন্দা কাটাতে ব্রিটিশ সরকার ব্রিটেনজুড়ে ‘ইট আউট হেল্প আউট’ নামে বিশেষ অফার চালু করে। এতে গত ৩ আগস্ট থেকে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেলে পঞ্চাশ শতাংশ ডিসকাউন্টের অফার দেওয়া হয়। সরকার প্রতি ক্রেতাপিছু ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে সেক্টরটিকে টিকিয়ে রাখতে মাসব্যাপী উদ্যোগ নেয়। কিন্তু,এ অফারের পরও গত তিন দিনে গ্রাহকদের ভীড়ের পুরনো চিত্র চোখে পড়েনি রেস্টুরেন্টগুলোতে।
ব্রিটেনে খাবার ঘরে ডেলিভারি খাতে জাস্ট ইট, উবার ইটস, ডেলিভারলুসহ বিভিন্ন বহুজাতিক অনলাইন কোম্পানিতে খাবার ডেলিভারির কাজ করেন প্রায় লাখখানেক বাংলাদেশি।
ব্রিটিশ বাংলাদেশি সাইদুল ইসলাম গত তিন বছর ধরে কাজ করছেন এ সেক্টরে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টের অফারটি চালুর পর ডেলিভারি খাতে চাপ কমবে, মানুষের ভীড় বাড়বে রেস্টুরেন্ট। কিন্তু কার্যত তা হয়নি।’
লন্ডনের কারি ক্যাপিটাল খ্যাত বাঙালীপাড়ার ব্রিকলেনে শুক্রবার বিকেলে ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলো কার্যত ক্রেতাশুন্য। এগুলোর ব্যাবস্থাপনা ও অভ্যর্থনার দায়িত্বরতদের ক্রেতাদের আশায় বাইরে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
আবার রেস্টুরেন্ট মালিকদের ব্যবসায় বিপুল লোকসানের খতিয়ানের উল্টো দৃশ্যও রয়েছে কমিউনিটিতে। ওল্ডহাম শহরের একটি রেস্টুরেন্টে করোনার সময়ে কাজ করেছেন মো. জামাল হোসেন।
মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে কাজে না গেলেও ব্রিটেনের কাগজপত্র আছে এমন কর্মীদের সরকার আশি শতাংশ বেতন দিয়েছে। বাংলাদেশি সব কর্মী রেস্টুরেন্টে কাজ করেছেন। আমি নিজেই সেই টাকা নিয়ে নয়-ছয়ের শিকার হয়েছি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ আক্তার হোসেন ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে পাচঁটি রেস্টুরেন্টের মালিক। তিনি শনিবার বলেন, ‘করোনায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটা ঠিক। তবে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হননি। ঘন বসতি বিহীন পর্যটন এলাকাতে যারা ব্যবসা করতেন তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। আমার দুটি রেস্টুরেন্ট নর্থ ওয়েলসে। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে করোনার গাইডলাইন ভিন্ন। ইংল্যান্ডের এক মাস পর এ মাসের শুরু থেকে আমরা রেস্টুরেন্ট রেষ্টুরেন্ট খোলার অনুমতি পেয়েছি। করোনার কারনে নয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব, খাবারের দাম অনুযায়ী মান প্রতিযোগিতার বাজারে অনেকে টিকে থাকতে পারছেন না। একের পর এক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হবার মূল কারণ এটাই।’