নাচগান আর ঝুমুরের ছন্দে মণিপুরিদের মহারাসলীলা উৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৭:৫৬:৩৪
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ছয়শ্রী গ্রামে মণিপুরি এলাকায় জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৮১তম ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলা উৎসব। উৎসবকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় উৎসব প্রাঙ্গণ। উত্তর ছয়শ্রী মহাপ্রভু মণ্ডপে মঙ্গল আরতির মাধ্যমে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব। নাচ, গান আর ঝুমুরের ছন্দে রাতভর শান্তিপূর্ণভাবে চলে এই রাসলীলা উৎসব।
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে আজ শনিবার (১৬ নভেম্বর) ভোর পর্যন্ত হয় এই উৎসব। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় আর নানা আয়োজনে এই উৎসব পালন করা হয়।
প্রতিবছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনাড়ম্বরভাবে অনুষ্ঠিত হয় মহারাসলীলা উৎসব। দিনের বেলায় রাখাল নৃত্যের পর থেকেই সন্ধ্যায় শুরু হয় রাসলীলা। আরতির মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। এরপর মহাপ্রভুর ভোগ আরতি ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। এছাড়া শ্রীকৃষ্ণের গোচারণ লীলা হয়।
স্থানীয় নৃত্য শিল্পী ওরাং চাও জানান, প্রতিবছর এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করি। আমরা দলগত ও এককভাবে আমাদের মনিপুরী ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুশীলন করে থাকি। এ বছরও আমরা সাজসজ্জা ব্যতিক্রম এনেছি। আশা করছি সকলের ভাল লাগবে।
মহারাসলীল উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দর জানান, শুরুতেই পরিবেশিত হয় রাসধারীতের অপূর্ব মৃদঙ্গ নৃত্য। মৃদঙ্গ নৃত্য শেষে প্রদীপ হাতে নৃত্যের তালে তালে সাজানো মঞ্চে প্রবেশ করেন শ্রী রাধা সাজে সজ্জিত একজন নৃত্যশিল্পী। তার নৃত্যের সঙ্গে বাদ্যের তালে তালে পরিবেশিত হয় মনিপুরী বন্দনা সংগীত। শ্রীকৃষ্ণ রূপধারী বাঁশি হাতে মাথায় কারুকার্য খচিত ময়ূর গুচ্ছধারী এক কিশোর নৃত্যশিল্পী তার বাশির সুর শুনে রাজগোপী পরিবেশিত হয়ে শ্রীরাধা মঞ্চে আসেন। রাতব্যাপী সুবর্ণ কংকনপরিহিতা মনিপুরী কিশোরীদের নৃত্য প্রদর্শন চলে। স্থানীয় শিল্পীরা এই পরিবেশনার জন্য মাসব্যাপী প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তারা বংশ পরম্পরায় এই নৃত্য শিখে আসছেন।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মণিপুরি সম্প্রদায়সহ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসেন মহারাসলীলা উপভোগ করতে। মণিপুরি নৃত্যকলা শুধু ছয়শ্রী নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখলে করে আছে। মহারাসলীলায় শিশু থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরী সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রাতে রাস উৎসব হয়ে উঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।