চালু না হওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়েছে মন্ত্রণালয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২২, ১২:০৩:২০
অনুমতি নিয়েও শিক্ষা কার্যক্রম চালু না করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা চেয়েছে সরকার। গত ১০ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের কাছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা পাঠানোর পাশাপাশি তাদের বিষয়ে ইউজিসির নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়েছে। মামলার কারণে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
একই দিন পৃথক চিঠিতে সাময়িক অনুমতির মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অনুমোদনবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাসহ তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কেও সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে ইউজিসিকে বলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন জানান, সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনুমতি নিয়েও অজ্ঞাত কারণে বছরের পর বছর চালু করছে না। কী কারণে এবং কেন তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন না, তা সরকার জানতে চায়। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে চালুর জন্য সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়। পুরোনো আইনে ৫ বছর ও পরের আইনে ৭ বছর এ সময়সীমা। এই ১২ বছর পার করে দেওয়ার পরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের তালিকাও চাওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১২ বছর পার করে দেওয়ার পরও নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বছরের ডিসেম্বরের পর আর ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাঁদের সাময়িক অনুমতিও বাতিল করা হবে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে অনুমতি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি বলে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন। ২০১৮ ও ২০২০ সালে অনুমতি পাওয়া কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। ইউজিসির তথ্যমতে, সরকারের অনুমোদন নিয়েও এখনও শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারেনি মোট চারটি বিশ্ববিদ্যালয়।
এগুলো হলো- ২০২০ সালের ১৬ জুন রাজধানীতে প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পাওয়া মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পাওয়া শাহ মখদুম বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৬ সালের ৭ জুন নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পাওয়া রূপায়ন-একেএম শামসুজ্জোহা ইউনিভার্সিটি এবং ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পাওয়া আহ্ছানিয়া মিশন ইউনিভার্সিটি।
এ ছাড়া আদালতে মামলা-মোকদ্দমার কারণে ইউজিসি অফিসিয়ালি বন্ধ রেখেছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো- ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান বাংলাদেশ (আমবান) ইউনিভার্সিটি, দি কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি। তবে এগুলো আইনের ফাঁক-ফোঁকরে নানাভাবে চলছে বলে ইউজিসির কাছে তথ্য রয়েছে।
ইউজিসি থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর ১২ বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও পুরোপুরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ২২টি। এই ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, এ ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরিভাবে তাদের সব শিক্ষা কার্যক্রম নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থান্তান্তর করতে হবে। না হলে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে সরকার বা কমিশন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য ভবন বা ক্যাম্পাস অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ সমকালকে বলেন, আইন অনুযায়ী এই ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয় তালিকা চেয়েছে, আমরা দিয়ে দেব। সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি’র চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি কেনা থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। করোনার দুই বছরে বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক সংকটে পড়েছে। এর ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি।