মাউশির প্রকল্পে জাতীয় কবির বই রাখার দাবি খিলখিল কাজীর
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৬:৪১
মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রকল্প চালু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। এ প্রকল্পে আগেরবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বই না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহী কবির নাতনি খিলখিল কাজী। তিনি চলমান প্রকল্পে কাজী নজরুল ইসলামের বই রাখার দাবি জানান।
জানা গেছে, ওই প্রকল্পের নাম সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)। এর আগে এ ধরনের একটি প্রকল্পের নাম ছিল সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ)। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এর আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য বই কিনলেও ছিল না কাজী নজরুল ইসলামের কোনো বই।
তালিকা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ওই প্রকল্পে ২১১ জন লেখকের ৩১২টি বই নির্বাচিত হলেও ছিল না জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম। ওই তালিকায় সর্বাধিক ছয়টি করে বই নির্বাচিত হয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আলী ইমাম ও কাইজার চৌধুরীর। এদের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচটি বই তালিকায় স্থান পায়। চারটি করে বই নির্বাচিত হয় ১০ লেখকের। যাদের মধ্যে বিপ্রদাশ বড়ুয়া, মোশতাক আহমেদ অন্যতম।
প্রকাশকরা জানান, সর্বশেষ ওই প্রকল্পের পর আর বই কেনার কোনো উদ্যোগ সরকার নেয়নি। তখন চার ধাপে প্রতিটি মোট ১০-১২ হাজার কপি করে কেনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান এসইডিপির প্রজেক্টে নির্বাচিত প্রতিটি কপি সেকায়েপে নির্বাচিত বইয়ের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেশি কেনা হবে। কেন না ‘স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস’ শীর্ষক এই স্কিমের আওতায় দেশের প্রায় সব কটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসূচির বই ও পুরস্কারের বই কেনা হবে। এ বছরের ২৭ মে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই প্রজেক্টের জন্য বই নির্বাচনের লক্ষ্যে লেখক ও প্রকাশকদের থেকে নমুনা আহ্বান করা হয়।
খিলখিল কাজী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি খুব মর্মাহত, তিনি আমাদের জাতীয় কবি তার বই কেনা হচ্ছে না। লোকে কি কাজী নজরুল ইসলামের বই পড়তে ভুলে যাচ্ছে, না ইচ্ছাকৃতভাবে তার বই রাখা হচ্ছে না? কারণ বাংলা ভাষার এত বড় একজন কবি, সেটা তো আমাদের বাঙালি হিসেবে বলতেও তো লজ্জা লাগে, যে তার বই রাখা হচ্ছে না! তিনি তো আমাদের বাংলাদেশের প্রতীক। বাংলা সাহিত্য বলুন, বাঙালি সংস্কৃতি বলুন, বাংলা সমাজের কথা বলুন, কিনা করেছেন জীবনে বাঙালির জন্য! সেখানে তার বই নেবে না! যাদের বই পড়ার মতো না, তাদের বইও সেখানে স্থান পেয়েছে’।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গতবারও নেয়া হয়নি, এবারও নাকি নেয়া হচ্ছে না। একটা কথা বলি, নজরুল ইসলামকে না পড়লে তার কিছু হবে না, বরং আমরা নিজেরা সমৃদ্ধ হতে পারব না, নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সমৃদ্ধ করতে পারব না। কারা এর সঙ্গে যুক্ত আমি তা জানি না, কেন তারা গত বছরও সিলেক্ট করছেন না বা এ বছরও করছেন না, এ প্রশ্ন আমার রয়ে গেল। আমি মর্মাহত, ক্ষুব্ধ’।
এ বিষয়ে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান।
খিলখিল কাজী বলেন, ‘আমি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, এটা সিলেকশনে আছেন। ওখানে অনেকেই সিলেকশন বোর্ডে আছেন। তারা মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন’।
এ বিষয়ে জানতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখানে বাংলা একাডেমির কোনো ভূমিকা নেই। পদাধিকার বলে বাংলা একাডেমির সভাপতি ও মহাপরিচালক কমিটির সদস্য পদে আছেন। আগামীকাল (বুধবার) এ-সংক্রান্ত আরেকটি বৈঠক হবে। খিলখিল কাজী আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলব’।
মাউশির ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সেকায়েপ প্রকল্পের মাধ্যমে সরক পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে এ কর্মসূচি সহায়ক বিবেচনায় সেকেন্ডারি এ প্রোগ্রাম (এসইডিপি) এর আওতায় ‘স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস’ অনুযায়ী দেশের ১৫ হাজার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি পরিচালিত হবে। কর্মসূচির বই ও পুরস্কারের বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতে হবে।
এতে বলা হয়, ছাত্রছাত্রীদের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিতে উৎসাহ প্রদানে এ কর্মসূচিতে প্রণোদনামূলক পুরস্কার হিসাবে বই দেওয়া হবে। এমন বই নির্বাচিত করা হবে যা শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দ ও উদ্দীপনা জোগাবে, শিক্ষার্থীদের মন ও মনন সমৃদ্ধ হবে, সর্বোপরি পুস্তক পাঠের আনন্দ সঞ্চারিত হবে। বইগুলো দেশ-বিদেশের সেরা লেখকের সেরা বই হওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তি রচনার অংশ হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী (মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী বিষয় কর্মসূচিতে সংযোজন করা যেতে পারে)।