ডা. মুমিনুল হকের চেম্বার যেন এক টুকরো শিল্পকলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২১, ৯:৪১:৩৮
আহমাদ সেলিম :
চিকিৎসক মুমিনুল হক এর ভেতরের শিল্পী সত্তার সাথে খুব কাছের অনেকেই অপরিচিত। অথচ চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ইতিমধ্যে চারটি প্রদর্শনী করেছে। তার মধ্যে একটি ছিলো যৌথ। প্রথম প্রদর্শনী হয় ২০১২ সালে, ঢাকার একটি গ্যালারীতে। ২০১৪ সালে সিলেটে হয় দ্বিতীয় প্রদর্শনী। তারপর কেটে যায় অনেক দিন। ত্রিশটি ছবি নিয়ে তৃতীয় প্রদর্শনী ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে। একই বছর পয়লা বৈশাখের সময় সিলেটের তরুণ চিত্রশিল্পী ইসমাইল গণি হিমনের সাথে যৌথ প্রদর্শনী হয় কুমারপাড়াস্থ শাহ আলম গ্যালারীতে।
থেমে নেই সময়, শিল্পীর সময় বয়ে যায় নিরবধি। চলমান করোনাকালেও তাঁর রং তুলির পৃথিবী ব্যস্ত সময় পার করছে। করোটির ভেতর জমানো ভাবনা নিয়ে ক্যানভাসে এঁকে চলেছেন একের পর এক ছবি। করোনায় মানুষের দুর্বিনীত রাত, যাপিত জীবন সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে তুলির আঁচড়ে। প্রায় দুই বছর ধরে প্রবাহিত করোনা মহামারিতে একেঁছেন অন্তত ত্রিশটি ছবি।
শিল্পী মুমিনুল হক সিলেটে এম.এ.জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতারের দন্ত বিভাগের একজন সিনিয়র চিকিৎসক। গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমানতালে চলছে ছবি আঁকা। তাইতো তাঁর হাতে গড়া চেম্বারকে হঠাৎ কেউ দেখলে শিল্পকলা বলে ভুল করতে পারে। নগরের মীরবক্রটুলা এলাকায় অবস্থিত সেই চেম্বারের প্রতিটি কক্ষের দেয়াল যেন এক একটি গ্যালারী। পরম এক মায়া জড়িয়ে আছে দেয়ালগুলোতে। সবখানে ঝুলছে ছবি। আছে আলো-আধারীর খেলা।
ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকা শুরু। বাবা বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রয়াত ডা. মো. ফজলুল হক এবং মা ছালেহা হক ছিলেন তাঁর শিল্পী জীবনের প্রথম শিক্ষক। তাঁদের অনুপ্রেরণাই তাকে শিল্পী করে তুলেছে। বর্তমানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন শহরের শিবগঞ্জ এলাকায়। করোনা অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রদর্শনী করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এই শিল্পী।
তিনি ছবি আঁকেন জীবনের, প্রকৃতির। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ফুটে ওঠে তাঁর রং তুলিতে। জলরঙ, তেলরঙ, কালি-কলম, অ্যাক্রোলিক মাধ্যমে আঁকা চিত্রকর্ম রয়েছে বেশী। শহুরে জীবনকেও শিল্পের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নতুন করে তুলে ধরতে ভালোবাসেন ক্যানভাসে। এই শিল্পীর মুক্তিযুদ্ধ এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আঁকা ছবিগুলো অনুপ্রেরণা দেয় নতুন প্রজন্মকে।
বরেণ্য শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছিলেন, ‘যখন সভ্যতার মধ্যে বিত্তবৈভব এসেছে, সভ্যতা শেষ হয়ে গেছে। সৃষ্টিটা হয় বেদনা এবং অপ্রাপ্তি থেকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে যায় না। এই যুদ্ধ নিজের বিরুদ্ধে, লোভের বিরুদ্ধে চালিয়ে যেতে হবে।’ আমরা শিল্পী এবং চিকিৎসক মুমিনুল হকের উজ্জ্বল এবং নিরাপদ জীবন কামনা করছি।