আজ পহেলা বৈশাখ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০২০, ৩:৫৬:৪০
আজ আর রমনার বটমূলে প্রাণের উচ্ছাস নেই। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ সংগীতের সুর ছুঁয়ে যাওয়া নেই। চারুকলার শিল্পীদের রঙতুলির আঁচর নেই। অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলে জীবনকে ভরিয়ে দেয়ার জন্য নেই মঙ্গল শোভাযাত্রা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সেই চিরচেনা দৃশ্য আজ আর দেখা যাবে না। না দেখা আর না পাওয়ার মধ্যে তবুও আশা জেগে থাকবে, প্রত্যাশা ডানা মেলে থাকবে। ঘরে ঘরে বন্দী হয়ে পড়েছে আনন্দের সেই বাঁধভাঙার জোয়ার।
কবিগুরুর কালজয়ী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা” গেয়ে আহ্বান করবো নতুন বছরকে। অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা সামনে দৃপ্ত-পায়ে এগিয়ে যাবো; গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত।
করোনাভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় তাই বলতে চাই:
মেঘ দেখ কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে,
হারা শশীর হারা হাসি
অন্ধকারেই ফিরে আসে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন এবার আর হচ্ছে না। রমনার বটমূলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে বর্ষোদয়ের যে বর্ষ আবাহন ছায়ানটের সেই অনুষ্ঠানও এবার হচ্ছে না। তবে গত তিনবছরের অনুষ্ঠানকে নিয়ে বর্তমান সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে গানে-কবিতায় এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। সকাল ৭টায়।
আবারো প্রধানমন্ত্রীর অভয় বাণী স্মরণ করতে হয়, যে আঁধার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। বৈশাখের রুদ্র রূপ আমাদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মাতিয়ে তোলে ধ্বংসের মধ্য থেকে নতুন সৃষ্টির নেশায়।
বিদ্রোহী কবির ভাষায়
ঐ নূতনের কেতন ওরে কাল-বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? – প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন- জীবন-হারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!
এদিকে পহেলা বৈশাখ তথা ডিজিটালি বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সীমিত আকারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’- এ প্রতিপাদ্যে সীমিত আকারে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দুই দিন আগে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেয়া হয়।
এতে জানানো হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নবসজ্জার অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে আজ পহেলা বৈশাখ ভোর ৭টা থেকে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছ থেকে সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এ অনুষ্ঠানের ফ্রেশ ফিড পাবে।
এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক নানা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের নির্বাচিত গান এবং বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনের সমাপনী কথন দিয়ে, যা বিটিভি ছাড়াও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আরেকটি ধারণকৃত অনুষ্ঠান বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত একটি বক্তব্য ছাড়াও বৈশাখের গান, নৃত্য, আবৃত্তি আয়োজন থাকবে। ফেসবুকে ডিজিটালি বর্ষবরণের আয়োজন করেছে উদীচী। অন্যদিকে জনসমাগম না করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ প্রতিপাদ্য করে এবারে বর্ষবরণের আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।
আজকের অন্যরকম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।