ত্রাণ বিতরণে অনিয়মে ফৌজদারি মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২০, ৩:৫০:৪৬
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে অনেকের। তাই খাদ্যসংকট মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ ও ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। তবে, বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এরই প্রেক্ষিতে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়। এদিন ত্রাণ বিতরণের নামে কোনো রকম অনিয়ম সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রয়েও অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. এরশাদুল হক স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে শহর ও গ্রামের বিপুলসংখ্যক মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাদ্য সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে ত্রাণ কার্যক্রম যেমন চাল, নগদ অর্থ, শিশুখাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করছে। এ কাজে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, কোথাও কোথাও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাসহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওই নির্দেশনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন তাত্ক্ষণিকভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করা হয়।
গতকাল সরকারি বাসভবনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্পষ্টভাবে একটা কথা বলতে চাই, ত্রাণ বিতরণে কোনো রকম অনিয়ম সহ্য করা হবে না, খেটে খাওয়া মানুষের ত্রাণ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলবে, তারা যেই হোক তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, করোনা নামক এ অদৃশ্য শক্তিকে পরাজিত করতে আমাদের সবাইকে আজ দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মতপার্থক্য ভুলে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন—সবাইকে ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।
করোনা সংকটে নিবেদিত চিকিৎসক-নার্স, হাসপাতাল কর্মী, চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অতীতের মতো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মনে রাখতে হবে ঘরে ঘরে অবস্থান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যারা পারবেন না, তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য বিপদ ডেকে আনবেন।
এদিকে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রয় নিয়ে কোনো কোনো স্থানে কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নজরে এসেছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আইন মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এর পরও এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য টিসিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
৭ এপ্রিল এ বিষয়ে টিসিবি থেকে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, র্যাব ও পুলিশ প্রশাসনকে সংঘটিত অনিয়মের যেকোনো অভিযোগ টিসিবির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রচারমাধ্যমে কোনো অনিয়ম প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিলার ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশব্যাপী প্রায় তিন হাজার ডিলারের মাধ্যমে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগে নয়জন ডিলারের লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে, আরো চারজনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।