সোনারগাঁও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, মাজেদের দাফন প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয়ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়নি। সকালে তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জানতে পেরে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে তিনি জানান, ‘রাত ৩টায় মাজেদের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে দাফন করে চলে যায়।’
এর আগে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মাজেদের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কালীগঞ্জের বাটমারায়। তার বাবার নাম আলী মিয়া চৌধুরী, মায়ের নাম মেহেরজান বেগম।
শ্বশুরবাড়িতে দাফনের সম্পর্কে মাজেদের চাচাশ্বশুর আলী আক্কাস বলেন, ‘মাওয়া ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় মাজেদকে এখন ভোলায় দাফন করা সম্ভব না। তাই সোনারগাঁয়ে শ্বশুরবাড়িতে দাফন করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। মামলা হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এ মামলার রায়ে আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে পাঁচ আসামি রিভিউ আবেদন করেন। তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আব্দুল মাজেদ ছাড়াও খন্দকার আবদুর রশিদ, এএম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান সে সময় পলাতক ছিলেন।
২৩ বছর ধরে পলাতক আব্দুল মাজেদকে গত ৭ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। পরদিন দুপুরে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এর পরের দিন মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আব্দুল মাজেদ। ৮ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পাঠানো প্রাণভিক্ষা খারিজের চিঠি পৌঁছায় কারাগারে। তখনই ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে শুরু করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।