প্রযুক্তিভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সেবার আওতায় বীমা কার্যক্রম এনে এ খাতের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বীমা খাতের সব কার্যক্রম প্রযুক্তিভিত্তিক অটোমেশন সিস্টেমের আওতায় আনুন।’
রবিবার উন্নত দেশ গড়ার ব্রত নিয়ে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রথমবারের মতো উদযাপিত জাতীয় বীমা দিবসে বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বীমা বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে এবং বীমা প্রকল্পে আরও বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করতে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি গ্রহণ করতে বলেন। তিনি গ্রাহকদের জন্য বীমা সেবা আরও সহজ করার লক্ষ্যে আধুনিক আইসিটি ভিত্তিক অটোমেশন সিস্টেম বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জনগণের এখনও বীমা সংস্থাগুলোর ওপর আস্থার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বিশেষ করে পরিবহন ও গার্মেন্টের মতো কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, শ্রমিকদের বীমা পলিসির আওতায় আনতে হবে, যাতে তারা দুর্ঘটনার মতো খারাপ সময়ে আর্থিক সুরক্ষা পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষিত যুবকদের বীমা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য বীমা প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ চালু করতে যাচ্ছে। বাবা-মা অথবা অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে, এমনকি শারীরিক সামর্থ্যের অভাবে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়। তাদের মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত লেখাপড়া নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বীমা খাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবিকার ব্যয় মেটাতে রাজনীতি করার পাশাপাশি বীমা খাতেও কাজ করেছিলেন। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু বীমা খাতকে আরও প্রাণবন্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠন করেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকার প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বীমা চালু করেছে। অন্যদিকে কৃষি বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, রেল যাত্রীদের জন্য বীমা ও ভবন বীমাসহ বিভিন্ন ধরনের বীমা চালু করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।
দেশের বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় সরকার সব বীমা সংস্থাগুলোকে অটোমেশন ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য এটি বাস্তবায়ন করছে।
শেখ হাসিনা আশা করছেন, এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন বীমা সংস্থাগুলোর পেশাদার ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি খাতের ওপর জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা বাড়াতে সহায়তা করবে।
‘গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকার আর্ট আইটি ভিত্তিক ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম সিস্টেম চালু করেছে,’ বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আশরাফুল আলম, বাংলাদেশ বীমা সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন এবং বাংলাদেশ বীমা ফোরামের সভাপতি বিএম ইউসুফ আলী বক্তব্য রাখেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বীমা সম্পর্কিত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি দেশের বীমা খাতে অবদানের জন্য পাঁচজনকে বিমা পদক বিতরণ করেন।