‘গোলাম আযমের বাংলায়’: স্লোগানের দায় অস্বীকার এনসিপির
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৫, ৮:০৭:১৭
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে কর্মসূচিতে ‘বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রাম বিরোধী’ স্লোগানের দায় অস্বীকার করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
‘গোলাম আযমের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’সহ যেসব নানা স্লোগানের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার দলটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অবস্থান তুলে ধরা হয়।
যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত সাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপির অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়, “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপির কোনো সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় স্লোগান কিংবা এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়নি।
“ফলে যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষটিকেই বহন করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকতে টানা ১০ বছরের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ ত্যাগের পর বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত নানা কর্মসূচি চলে ক্ষমতাচ্যুত দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এবং পরে শাহবাগে এনসিপির ডাকে আসা জমায়েতে অংশ নেয় জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বিতর্কিত ও ইতিহাসবিরোধী স্লোগান দেন, যার মধ্যে ছিল—‘গোলাম আযমের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘নব্য রাজাকার শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ছাড়ো’, ‘জয় বাংলা নয়, ন্যায্য বেতন চাই’, ‘শাহবাগ মুক্ত কর, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ কর’ এবং ‘আল্লাহর জমিনে নাস্তিকের ঠাঁই নাই’।
এমনকি জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় এক পক্ষ বলেছিল, ‘এইটা আমাদের গান না, বন্ধ করো।’ এসব স্লোগান সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় এবং এনসিপিকে এর দায় নেওয়ার দাবি ওঠে।
বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম, যিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানের আক্রমণের পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেখা করে তাদেরকে সমর্থন জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের পক্ষে তার দল সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিল, সেই নেতার পক্ষে স্লোগান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বেশি।
কোন স্লোগানগুলো ‘আপত্তিকর’ ছিল, সে বিষয়ে অবশ্য এনসিপির বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি।
দলটি বলছে, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মত, পক্ষ এবং সাধারণ ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলেও একটি পক্ষ সচেতনভাবে দলীয় স্লোগান এবং বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রাম বিরোধী স্লোগান দিয়েছে। যা জুলাই পরবর্তী সময়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।”
এনসিপিকে এর সঙ্গে জড়ানো সম্পূর্ণ অহেতুক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বরং এনসিপি সদস্যদের বক্তৃতা ও স্লোগানে এই জনপদের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়সমূহ তথা ১৯৪৭, ১৯৭১, এবং ২০২৪ এর প্রতিফলন ছিল।”
আন্দোলনকারীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সময় একটি পক্ষ আপত্তি জানালেও তারা ‘দৃঢ়তার সঙ্গে’ গাওয়ার কথাও তুলে ধরা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের শক্তির প্রতি যে বার্তা
এই বিজ্ঞপ্তিতে কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক শক্তির প্রতিও বার্তা তুলে ধরা হয়।
এনসিপি ২০২৪, ১৯৭১ এর সঙ্গে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষেও ‘ঐতিহাসিক সংগ্রাম’ হয়েছে বলে মনে করে এবং সবগুলোর ‘যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা’ বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত বলেও মনে করে।
দলটি বলছে, “যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে।”
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘আবশ্যিকভাবে বাংলাদেশপন্থি ভূমিকা পালন করে যেতে হবে’ বলে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “এনসিপি মনে করে কোনো রাজনৈতিক দল বা পক্ষের পূর্বেকার রাজনৈতিক অবস্থান বা আদর্শের কারণে ইতঃপূর্বের বিভাজন ও অনৈক্যের রাজনীতির সূত্রপাত ঘটলে সংশ্লিষ্ট দল বা পক্ষের দায় রয়েছে বাংলাদেশের মানুষের সামনে নিজেদের সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাতীয় ঐক্যের পথে হাঁটার।”
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার ‘বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমেই’ কেবল মুজিববাদকে ‘সামগ্রিকভাবে পরাস্ত’ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করে এনসিপি।
বাংলাদেশের জনগণের সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সব পক্ষকে ‘দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীল আচরণের’ আহ্বানও জানানো হয় এনসিপির বিজ্ঞপ্তিতে।