মিসবাহ সিরাজকে অপহরণের পর কুপিয়ে জখম, মুক্তিপণ দিয়ে ভোরে উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:৫৩:৪৪
আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণের পর কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের কবল থেকে থেকে মুক্তিপণ দিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। উদ্ধারের পর নগরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টার দিকে নগরের সুবিদবাজার একটি বাসার সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ভোর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় সগরের সাগরদিঘীর পাড় এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
অপহরণ হওয়ার আগে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিএনজি অটোরিকশা করে সুবিদবাজার এলাকায় একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ফাজিলচিশ্ত নিজ সামনে সামনে পৌছামাত্র কয়েকটি মোটরসাইকেলে যুবকরা তার অটোরিকশার গতিরোধ করে। এসময় অস্ত্রেরমুখে অন্য একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়, এমনটি জানায় সূত্র।
এরপর রাত সাড়ে ৩টা দুর্বৃত্তরা তার মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের লোকজনের কাছে ফোন দিয়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অবশ্য পরে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে হস্তান্তরের পর ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে নগরের সাগরদিঘীরপাড় থেকে এনে রক্তাক্ত অবস্থায় সুবিদবাজার মাসালাবাজারের সামনে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রাগীব বাবেয়া হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করেন স্বজনরা। পরে তাকে ভোররাত ৪টার দিকে নগরের সোবহানীঘাটস্থ আল হারামাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং এভারগ্রীনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
আল হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসক ডা. চৌধুরী নাহিয়ান বলেন, ভোররাত ৪টার দিতে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। যদিও স্বজনরা বলেছেন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
ডা. চৌধুরী নাহিয়ান আরো বলেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বাম পায়ে হাটুর নীচে রক্তাক্ত কাটা জখম রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর সকাল ১০টার দিকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান স্বজনরা।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ অবগত হয়েছেন। পুরো ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি।
এ বিষয়ে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মেয়ে মুনতাহা আহমদ মিসবাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার বাবার অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি মানুষ। কখনো কারো ক্ষতি করেননি। শুধু বলবো, আমার বাবার অবস্থা গুরুতর।’ সবার কাছে তার বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে বিদেশ পাড়ি জমান। ওই সময় থেকে আত্মগোপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে এসএমপির বিভিন্ন থানায় ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।