সৌদি আরবের বাদশাহ এখন যুবরাজ মোহাম্মদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ৮:৩০:৪২
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছে। তার বয়স হয়েছে ৮৬ বছর। এর ফলে রাষ্ট্রীয় বৈঠক ও বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানানোর দায়িত্ব নিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী যুবরাজ। জনসমক্ষে বাদশাহের উপস্থিতি এখন একেবারে বিরল বলাই চলে।
সৌদি আরবে আসা বিদেশি নেতাদের অভ্যর্থনা জানানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন আঞ্চলিক সম্মেলনে নেতৃত্বদান-সবকিছুই এখন করছেন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। অন্যদিকে সৌদির অশীতিপর বাদশাহ সালমান ক্রমেই আড়ালে চলে যাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব না পেলেও ৩৬ বছর বয়সী যুবরাজই হয়ে উঠছেন সৌদির ‘মুকুটবিহীন’ বাদশাহ।
গত মঙ্গলবার সৌদি আরবে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সম্মেলনে অংশ নেওয়া অতিথিদের স্বাগত জানিয়েছেন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি তার বৃদ্ধ বাবার কাছ থেকে একে একে সব দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন। আর এভাবেই উপসাগরীয় প্রভাবশালী দেশটির মুকুটহীন বাদশাহ হয়ে গেছেন পাশ্চাত্যে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান।
২০১৭ সালের জুনে সিংহাসনের উত্তরসূরি নিয়োগ দেওয়া হয় এমবিএসকে। এরপর থেকে সৌদির কার্যত নেতা হিসেবেই তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু তার ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ব প্রদর্শন এর আগে কখনোয়ই এতটা স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি।
মঙ্গলবার জিসিসি সম্মেলনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সাধারণত উষ্ণ আলিঙ্গন ও বন্ধুত্বপূর্ণ করমর্দনের পর বার্ষিক সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন বাদশাহ সালমান। কিন্তু এবারে তার কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।
কার্নেগি ইন্ডাওম্যান ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ইয়াসমিন ফরুক বলেন, সৌদি যুবরাজকে দেশের কার্যত নেতা হিসেবে বিবেচনা করার ধারণা তখনই এসেছে, যখন বাদশাহ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকেন। তখন বিদেশি প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে তিনি বৈঠক ও বিভিন্ন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
তিনি বলেন, জিসিসি সম্মেলনে নতুন যা দেখা গেছে, তা হলো, সৌদি বাদশাহ তার দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালনের পরেও সিংহাসনের উত্তরসূরি আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় জাতীয় ও গণমাধ্যমে সামান্তরালভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে লোহিত সাগরের তীরে নিওমে বসবাস করছেন বাদশাহ সালমান। বিদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সর্বশেষ বৈঠক ছিল রিয়াদে ২০২০ সালের মার্চে। তার সর্বশেষ বিদেশ সফর ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ওমানে। সেখানে প্রয়াত সুলতান কাবুসের পরিবারের প্রতি শোক জানাতে গিয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবারের সম্মেলনে বাদশাহ সালমান কেন উপস্থিত ছিলেন না, সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহের শুরুতে দেশের বাজেটের ওপর তিনি টেলিভিশনে একটি ভাষণ দিয়েছেন।
সৌদি সরকারের উপদেষ্টা আলী শিহাবি বলেন, বাদশাহ সুস্থ ও সচেতন আছেন। বুধবার এক টুইটবার্তায় তিনি জানান, নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বাদশাহর স্বাস্থ্য চমৎকার। প্রতিদিন তিনি ব্যায়াম করছেন। কিন্তু তার বয়স ৮৬ বছর হয়ে যাওয়ায় এবং মাস্ক পরতে অস্বস্তি বোধ করায় নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে জনসমক্ষ থেকে তিনি দূরে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, রয়েল কোর্টের সঙ্গে বর্তমানে যে কোনো আয়োজন যুবরাজের অফিসের মাধ্যমেই হচ্ছে। বাদশাহ সালমান দৃশ্যের অন্তরালে চলে গেছেন। এমবিএসকে এখন আর বাদশাহ বানানোর কিছুই নেই, প্রাসাদে তিনিই বাদশাহ।
সিংহাসনের বসার ক্ষেত্রে তার পথ পরিষ্কার। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তার সামনে বাদশাহ হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা নেই।
বাদশাহ সালমানের চেয়ে যুবরাজ অনেক বেশি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। তিনি সৌদির আকাশসীমা দিয়ে ইসরায়েলি উড়োজাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন।