রাজনীতির খেলায় শেখ হাসিনা ফার্স্ট: পরিকল্পনামন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ নভেম্বর ২০২১, ৮:২১:১৭
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। আওয়ামী লীগ সরকারের জন্ম খাল, বিল ও ঝিলে। আওয়ামী লীগ মানে আন্দোলন, বিকাশ ও পরিবর্তন। আমাদের শিখর অনেক গভীরে। ফলে আমাদের সঙ্গে ফাইট করা কঠিন হবে। রাজনীতির খেলায় শেখ হাসিনা ফার্স্ট।
সোমবার এলডিসি উত্তরণ নিয়ে জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তবে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় জীবন ও জীবিকার মেল বন্ধন ঘটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সিলেকটিভ লকডাউন দিয়েছেন। পোশাক শ্রমিক, ধান কাটা শ্রমিক এবং অন্যান্য শ্রমিকদের জন্য লকডাউন ছিল না। সেই সঙ্গে অর্থনীতি সচল রাখতে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। এখানে কিছু চুরি চামারি, মিসিং এবং মিস ফায়ার হলেও প্রণোদনা কাজে লেগেছে বলে মন্তব্য করে তিনি।
তিনি বলেন, দেশের সব শ্রেণির মানুষের কঠোর পরিশ্রমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে। এভাবেই এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সফল হব।
মন্ত্রী আরও বলেন, সারা দেশে ইউপি নির্বাচন চলছে। অত্যন্ত আনন্দমুখর ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপি প্রথমে বলল নির্বাচন করব না। এখন তাদের লোকজন বেনামে নির্বাচন করছে। এতে কোনো বাধা নেই। পরিষ্কার গণতন্ত্র চাইলে চর্চা করতে হবে। মাঠ ছেড়ে গেলে চলবে না। খেলার জন্য মাঠে নামতে হয়। গ্যালারিতে বসে খেলা যাবে না।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চুরি কিছু হচ্ছে। কিন্তু সেটি চিল্লাচিলি করে থামানো যাবে না। এতে চোরের কিছুই হবে না। এর জন্য আইন আছে। আইনের মাধ্যমে ধরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুশাসন আকর্ষণীয় কথা হলেও ভাত আগে না কফি আগে- সেই অবস্থা হয়েছে। ক্ষুধার্থ মানুষের প্রয়োজনে ভাত আগে দিতে হবে। তেমনি তর্কবিতর্ক হয়- উন্নয়ন আগে, না গণতন্ত্র আগে। বিএনপি সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে কার্যকর করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্ট্যান্ডডিং কমিটির সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নও সমাজের মধ্য ভারসাম্য নেই। মাথা পিছু আয় বাড়লেও লাভ নেই। যদি আয়ের সমবন্টন না হয়। দেশে ধনী গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। মেধাবী তরুণরা দেশে থাকতে চায়না। সুযোগের অভাবে তারা এখানে মেধা চর্চা করতে পারেন না। ব্যাপক দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। অনেকে টাকা তৈরির মেশিনে পরিণত হয়েছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশে এসে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। গণতন্ত্র না থাকায় সুশাসন হচ্ছে না। দেশে কাগুজে শান্তি বিরাজ করছে। মেগা প্রকল্প হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু এগুলোর ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স ভালো হচ্ছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএসের গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুল্লা আল মামুন। বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। এছাড়া বিশ্বব্যাংতের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক রশীদ আল মাহমুদ তিতুমীর, বাংলাদেশ উইমেনন্স চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমেদ এমপি, সংসদ সদস্য ড. হাবিবে মিল্লাত, প্রফেসর ড. এমএ আজিজ এবং ড. আবু ইফসুফ প্রমুখ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে তিনটা বার্তা বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে। ২০২৬ সালের পর বাজার সীমিতকরণ হবে, দক্ষতা ঘাটতি, স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম। এগুলো অভ্যন্তরীণ সমস্যা। কিন্তু অন্যদিকে এর কিছু সুবিধা আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কারকে আমলে নিতে হবে। এটা কেবল কাগজে কলমে পরিকল্পনা নয়, এটা বাস্তবায়নে যেতে হবে। রপ্তানি প্রতিযোগীতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি, বিশ্ববাজারে পোশাক খাত একক ভাবে লড়ে যাচ্ছে, কিন্তু এটাই শেষ নয়। অন্য খাতেও মনোযোগ দিতে হবে। শুল্কহার যৌক্তিকীরণ করতে হবে। এছাড়া উন্নয়ন সমভাবে করতে হবে। গুলশান, বনানী বা যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা দেখলে মনে হয় নিউইয়র্ক এ আছি। আমার ছেলেকে একটি ছবি পাছিয়েছিলাম। ও বলেছিল আমি নিউইয়র্কে আছি কিনা? কিন্তু রংপুর বা কক্সবাজার বা দেশে অন্য অঞ্চলে যান এগুলোর কিছুই নেই। এটাকে উন্নয়ন বৈষম্য বলে।
সংলাপের অন্য একটি অধিবেশনে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান বলেন, বাংলাদেশকে তুরস্কের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। জাতীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। তুরস্ক বাংলাদেশকে যেকোনো ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অর্জন। এশিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ সামাজিক সূচকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। এ যাত্রাপথে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, সেসব সমস্যা যেকোনো দেশেই হতে পারে।
সুজন-সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নিতে হবে। ৫০ বছর আগে যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল সমপরিমাণের, সেখানে ৫০ বছর পর এসে দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি। তিনি গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের তুলনা করতে গিয়ে বলেন গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন একে অপরের বিকল্প হতে পারে না, আমাদের উভয়েরই প্রয়োজন।
সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, এলডিসির বিষয়টি এখনো শুধুমাত্র নীতি-নির্ধারক পর্যায়েই রয়ে গেছে। কিন্তু সফলতা পেতে হলে সরকারের জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাসেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, উন্নীত হবার পর আমাদের কি করণীয় হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নটা কি টেকসই হবে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একইসঙ্গে উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্বে তাদের অবস্থান সমুন্নত করতে পারে।
পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন সময় এসেছে বাংলাদশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যদিও বাংলাদেশ বাড়তি সময় চাচ্ছে, তবুও দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের উচিৎ হবে না বাড়তি সুবিধাটুকু নেয়ার। যদি কোরিয়া, ভিয়েতনাম পারে, তবে বাংলাদেশও পারবে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।