‘বর্ণবাদী’ হত্যাকারী কিশোরকে মুক্তি দেয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২১, ৭:১৩:৪৮
পুলিশের নির্যাতন ও শেতাঙ্গ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন চলাকালে গত বছর সেমি-অটোমেটিক রাইফেল চালিয়ে দুই বিক্ষোভকারীকে হত্যা ও একজনকে আহত করা কাইল রিটেনহাউসকে (১৮) আদালত মুক্তি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে, উইসকনসিনের কেনোশাতে গত বছর জাতিগত অস্থিরতার সময় দুইজনকে গুলি করে হত্যাকারী কিশোর রিটেনহাউসকে আদালত খালাস করে দেওয়ার পরে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। যদিও এর আগে তিনি বলেছিলেন যে তিনি বিচারকদের রায় মেনে নিয়েছেন।
গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় জো বাইডেন একটি ভিডিও টুইট করেছিলেন, যাতে কোনও প্রমাণ ছাড়াই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের সঙ্গে রিটেনহাউসের যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়।
গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের বাইরে একজন প্রতিবেদক ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রশ্ন করেন যে, তিনি এই কিশোর সম্পর্কে তার অতীতের মন্তব্যে অটল আছেন কিনা।
তখন বাইডেন তিনি এইমাত্র খবরটি শুনেছেন উল্লেখ করে বলেন যে, ‘বিচারকরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি তার পক্ষে আছি। বিচার ব্যবস্থা কাজ করে এবং আমাদের এটি মেনে চলতে হবে’।
তবে পরে তিনি একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেন, ‘যদিও এই রায় অনেক আমেরিকানকে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন করবে, যাদের মধ্যে আমিও একজন, তথাপি আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে বিচারকরা কথা বলেছেন’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করা এই রায় নিয়ে অবশ্য তেমন বড় কোনো প্রতিবাদ হয়নি এখনো।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট উইসকনসিনের কেনোশা শহরে জ্যাকব ব্লেক নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে পিঠে সাতবার গুলি করে পঙ্গু করে দেয় পুলিশ। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ চলাকালে ২৫ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রাক্তন পুলিশ যুব ক্যাডেট কাইল রিটেনহাউস জোসেফ রোজেনবাউম (৩৬) এবং অ্যান্থনি হুবার (২৬) নামের দুজনকে মারাত্মকভাবে গুলি করা এবং গেইজ গ্রোসক্রুটজ (২৮) নামের একজনকে আহত করার কথা স্বীকার করেন। তবে তার দাবি, তিনি আত্মরক্ষার জন্য এটি করেছিলেন। সেসময় কাইল রিটেনহাউস এর বয়স ছিল ১৭ বছর।
এর তিন মাস আগে মিনেসোটায় জর্জ ফ্লয়েড নামের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পুলিশ।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে ১৭ বছর বয়সী রিটেনহাউস বলেছিলেন, বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে তারা তাকে আক্রমণ করতে এলে তিনি নিজের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র বের করেন এবং আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালাতে বাধ্য হন। তিনি যাদেরকে গুলি করেছিলেন তারাও সবাই শেতাঙ্গ ছিলেন।
এ ঘটনার পর হত্যাসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয় রিটেনহাউসের বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতো।
তার আইনজীবীরা তাকে একজন নাগরিক-মনস্ক কিশোর হিসাবে উপস্থাপন করেন, যিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার জন্য ওই মধ্য-পশ্চিম মার্কিন শহরে গিয়েছিলেন এবং নিজের প্রাণ বাঁচাতে শুধুমাত্র পুরুষদের গুলি করেছিলেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর অভিযোগ, রিটেনহাউসের কাছে থাকা অ্যাসল্ট রাইফেলটি ছিল অবৈধ। অস্ত্র বের না করলে হতাহতের ঘটনা ঘটতো না বলেও দাবি তার।
প্রথম নিহত রোজেনবাউম সেই রাতে অনিয়মিত আচরণ করেছিলেন এবং রিটেনহাউসকে তাড়া করে তার বন্দুকটি দখল করার চেষ্টা করেন। আর তখনই রিটেনহাউস তাকে মারাত্মকভাবে গুলি করে দেন।
দ্বিতীয় নিহত হুবার তখন রিটেনহাউসকে একটি স্কেটবোর্ড দিয়ে মাথায় বা ঘাড়ে আঘাত করলে তিনি তাকেও গুলি করে দেন।
এরপর গ্রসক্রুটজ নামের আরেক ব্যক্তি রিটেনহাউসের দিকে তার বন্দুক তাক করলে রিটেনহাউস তাকেও গুলি করে আহত করেন।
রিটেনহাউসের আইনজীবী মার্ক রিচার্ডস যুক্তি দেন যে, তার মক্কেল প্রথমে হামলা করেননি এবং নিজের জীবন বাঁচাতেই শুধু তিনি গুলি করেন।
রিটেনহাউসের গুলিতে নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তি হুবারের বাবা-মা বলেছেন, এই রায়ে তাদের ‘হৃদয় ভেঙে গেছে’।
কারেন ব্লুম এবং জন হুবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই রায় একটি অগ্রহণযোগ্য বার্তা পাঠায় যে, সশস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তিরা যে কোনও শহরে হাজির হয়ে সহিংসতা উসকে দিতে পারে এবং তারপরে রাস্তায় লোকজনকে গুলি করার পক্ষে ন্যায্যতা তৈরি করার জন্য তারা নিজেরাই যে সহিংসতা উস্কে দিয়েছে সেটিকেই ব্যবহার করতে পারে’।
এই রায় মার্কিন সমাজের রাজনৈতিক বিভাজন উন্মোচিত করেছে। একদিকে, অনেক ডেমোক্র্যাট এই রায়ের নিন্দা করেছেন। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা বলছেন ন্যায়বিচার করা হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ কাইল রিটেনহাউসকে ইন্টার্নশিপের প্রস্তাব দিয়েছেন।