বারান্দায় বাগান করার আগে জেনে রাখুন
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২১, ৬:৫৫:৪৬
সবুজের সংস্পর্শ শরীর ও মনকে করে প্রফুল্ল। বিশেষ করে শহরের ফ্ল্যাটবন্দি জীবন যাদের, তাদের জন্য দম ফেলতে এক চিলতে বারান্দাই ভরসা। কিন্তু গাছ কিনে টবে লাগালেই বাগান হয় না। কতটা আলো-বাতাস আসছে, কোন গাছে কেমন মাটি বা সার লাগবে, টবটা কেমন হবে, জানতে হয় এসবও।
বারান্দায় কোন গাছ লাগাবেন
ছোট পরিসরে মাঝারি টবের জন্য উপযোগী গাছই বারান্দায় যুৎসই। ফলের গাছ বারান্দায় লাগালে সেগুলো ঠিকঠাক বেড়ে উঠতে পারে না। বারান্দায় আলো কম থাকলে উপযোগী হলো পাতা খাওয়া যায় এমন সবজি, এবং যেগুলোতে ফুল বা ফল কোনোটাই হয় না। সরাসরি সূর্যের আলো থাকলে ফুল গাছ লাগানো যায়।
অল্প কিছুক্ষণ সূর্যের আলো পড়লে যেগুলো লাগানো যায়-লেবু, মরিচ, জুঁই, অর্কিড, ক্যাকটাস, অ্যাডেনিয়াম, মানিপ্লান্ট, বাগান বিলাস, স্নেক প্লান্ট, লাকি ব্যাম্বু্ ইত্যাদি। এ ছাড়া মৌসুমি ফুলগাছ, রেইন লিলি, কয়েন প্লান্ট, ইঞ্চ প্লান্ট, বেবি টিয়ার্স, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী, পর্তুলিকা, পিটুনিয়া, বেলি, গোলাপ, টগর, পাতাবাহারও লাগাতে পারেন।
বারান্দার গাছের যত্ন
কোন গাছ কীভাবে পটিং করবেন, মাটি কীভাবে প্রস্তুত করবেন, কোন গাছের কতটুকু আলো ও পানি দরকার এসব জেনে রাখা চাই।
প্রথমেই আসা যাক পটিং প্রসঙ্গে। পটিং হচ্ছে কী ধরনের টবে গাছ লাগাবেন এবং কোন গাছের জন্য কোন সাইজের টব লাগবে সেটা ঠিক করা। গাছের আকার অনুযায়ী পট বাছাই করতে হবে। বড় আকারের টবে গাছ বেশি পুষ্টি পাবে। শিকড় বাড়ার পর্যাপ্ত জায়গাও পাবে। আবার যেসব গাছ ধীরে বাড়ে সেগুলোর ক্ষেত্রে ছোট টব নেওয়া যায়। লেবু, ক্যাপসিকাম বা ফুল গাছের জন্য বড় টব বাছাই করা ভালো।
এ বিষয়ে বৃক্ষপ্রেমী জারিন তাসমিন বললেন, ‘টবে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে টবের নিচে ছোট করে কয়েকটি ছিদ্র করে নিতে হবে। খোলা মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে পানি নিষ্কাশন হলেও টবের পানি নিষ্কাশনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা চাই। না থাকলে টবে পানি আটকে শিকড় পচে যেতে পারে।’
মাটি তৈরি
শুরুতে এটাকে অনেকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান না। বাইরের খোলা পরিবেশে মাটিতে গাছ লাগালে সেখানে শেকড় অনেক দূর ও গভীরে ছড়াতে পারে। তাই গাছ সহজে পুষ্টি নিতে পারে। বারান্দার টবে সেই সুযোগ নেই। তাই মাটিতেই থাকতে হবে দরকারি সব পুষ্টি। এক্ষেত্রে কোকোপিট, কেঁচো সার এগুলোর মিশ্রণটা বেশ কাজের। সাধারণত তিন ভাগ কোকোপিটের সঙ্গে এক ভাগ কেঁচো সার তথা ভারমি কম্পোস্ট মেশাতে হয়। সেই অল্প পরিমাণে খৈল ও গাছের ক্যালসিয়ামের চাহিদানুযায়ী হাড়ের গুঁড়াও মেশানো যায়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ নূর হৃদয় জানালেন, ‘বারান্দায় হাসনাহেনা, মানিপ্লান্ট, পাতাবাহার, গোলাপ ও আরও কিছু গাছ লাগিয়েছি। পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি জৈব সারই ব্যবহার করেছি। ছোট পরিসারে সাধারণত জৈব সার ব্যবহার করাই ভালো। মাটি যদি শক্ত বা এঁটেল মাটি বেশি থাকে, তবে তাতে রাসায়নিক সার মানানসই হয় না।’
গাছের খাবার-পানি
সাধারণত সব গাছে সমান রোদ লাগে না। এমনকি সবগাছে একই পরিমাণ খাবার বা পানিও লাগে না। ফুল ও ফলগাছে রোদের প্রয়োজন হয় বেশি। আবার মানিপ্লান্ট, কয়েন প্লান্ট, লাকি ব্যাম্বু, স্নেক প্লান্ট জাতীয় গাছে বেশি রোদ লাগে না। পানি গাছের জন্য জরুরি। তবে কিছু গাছে বেশি পানি দিলে গাছ মারাও যেতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুটা মাটি হাতে নিয়ে দেখতে হবে সেটা স্যাঁতস্যাঁতে কিনা। যদি মাটির আর্দ্রতা ঠিক থাকে তবে পানির প্রয়োজন নেই। শুকনো ও গুঁড়ো মনে হলে পানি দিতে হবে। গাছের পাতায়ও পানি স্প্রে করে দিতে হবে দুই তিন দিন পর পর। আর যে কোনও ধরনের গাছের জন্যই একটি উপকারী বস্তু হলো এপসম সল্ট। এক গ্যালন পানিতে ২ চা চামচ ভালো করে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করলেই গাছের ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দূর হবে। এতে ফুলের সংখ্যা বাড়ে, পাতাও সতেজ হয়।
তবে গাছের অতিরিক্ত যত্ন নিতে গিয়ে আমরা অনেক সময় কিছু ভুল করি। যেমন অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান কিংবা সার ব্যবহার করে ফেলি। এটি কখনোই উচিত নয়। বেশি সার দিলে গাছ বেশি দ্রুত তো বাড়বেই না, উল্টো সেটা মারা যেতে পারে। আবার অনেক সময় গাছ লাগিয়ে দায় সারা ভাব দেখাই। গাছের মরা বা আক্রান্ত পাতা নিয়মিত ছেঁটে দিতে হবে।
গাছের কেমন দাম?
এখন স্থানীয় নার্সারিগুলোতেই অনেক নামিদামি গাছ পাবেন। রাজধানীর দোয়েল চত্বরেও অনেক গাছের সমারোহ। আবার ফেসবুকে সার্চ করলেও পেয়ে যাবেন অনেক অনলাইন নার্সারি। সাধারণত দেশীয় ফুল গাছগুলোর দাম পড়বে ৩০-১০০ টাকা। ফলগাছ পাওয়া যাবে ২০০-৪০০ টাকায়। তবে বড় আকারের গাছ যদি ছোট টবে বিক্রি করতে দেখেন, সেটা না কেনাই ভালো। আবার দামি অর্কিডের দামই শুরু হয় সাধারণত হাজার-দুই হাজার টাকা থেকে।