যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিনে সিলেটের দম্পতির উদ্যোগের গল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২১, ৫:২৮:৪২
যুক্তরাষ্ট্র্রভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইন্ক-৫০০০ (Inc.5000)এর তালিকায় স্থান পেয়েছে সিলেটী দম্পতির সফলতার গল্প।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শাহেদ ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহেরা চৌধুরীর হাতেগড়া প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এসজে ইনোভেশন’র সাফল্যগাথা ম্যাগাজিন ইন্ক-৫০০০-এ ১৮ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে।
শাহেদ ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহেরা চৌধুরী (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী)-এর আইটি প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন (SJ Innovation)। সেবার মান, সেবা গ্রহহিতাদের আস্থা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখিয়ে শাহেদ ও শাহেরার এসজে ইনোভেশন মর্যাদাপূর্ণ ইন্ক ম্যাগাজিনের এ বছরের তালিকায় ৪৪৪২ নম্বরে স্থান করে নিয়েছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও (২০২১ সালে) তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক সেরা ৫ হাজার উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছে ইন্ক-৫০০০ ম্যাগাজিন। আমেরিকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে তারা এই তালিকা তৈরি করে যা ইনক-৫০০০ নামে বিশ্ব পরিচিত। ফলে তথ্য প্রযুক্তিখাতের যে কোন উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্টানের জন্য এই তালিকায় স্থান পাওয়ার বিশেষ মর্যাদার।
ইতিপূর্বে এই ম্যাগাজিনের তালিকা মাইক্রোসফট সহ পৃথিবীর খ্যতিমান প্রতিষ্ঠানগুলো জায়গা করে নিয়েছিল। তবে ২০২১ সালে এই ধারায় যুক্ত হল বাংলাদেশি দমবপতির তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক শাহেদ ইসলাম এবং যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশী বংশদ্ভোত শাহেরা চৌধুরীর হাত ধরে ২০০৪ সাল শুরু হয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশনের যাত্রা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আস্থার সাথে সেবাদান আর গ্রাহকদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েই মর্যাদা পূর্ণ এই অবস্থানে আসতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিলেট পাইলট স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে আমেরিকায় পাড়ি দেন শাহেদ ইসলাম। গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাতিউরা এলাকায়। আর তার স্ত্রী শাহেরা চৌধুরী যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টারে বড় হন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি সিলেট শহরে। এই দম্পতি সফটওয়ার প্রগ্রামিং এর উপর উচ্চতর পড়াশুনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে তুলেন তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন। ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নামিদামি কোম্পানীকে ওয়েব সেবা দান করে নজর কাড়ে তথ্য প্রযুক্তির জগতে। ৩ হাজারেরও বেশী ওয়েব সাইটের উপর কাজের অভিজ্ঞতা থাকা এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের দেড় শতাধিক কর্মী নিয়ে রাজধানী ঢাকা ও সিলেটে দুটি শাখা পরিচালনা করছে।
ইন্ক-৫০০০ এর তালিকায় স্থান পাওয়া এসজে ইনভেশনের জন্য বড় অর্জন উল্লেখ্য করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেদ ইসলাম বলেন, কর্মীদের খুশী রেখে সেবাগ্রহিতাদের সফলতা এনে দেয়ার মধ্যদিয়ে কোম্পানীর সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যাত্রা শুরু এই প্রতিষ্ঠানের। এ অর্জনের মধ্যদিয়ে আমরা মনে করি আমাদের বিজনেস মডেল অত্যান্ত কার্যকর ছিল। মর্যাদার এ তালিকায় স্থান পেয়ে আমরা গর্বিত। সততা, সেবার মান এবং সেবাদানে অভিজ্ঞ কর্মীদের উপর আস্থার ফলে অতিমারির এই সময়েও এসজে ইনোভেশন বাংলাদেশে নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে বিশ্বের অনেক বড় প্রতিষ্টানগুলোও তাদের জনশক্তি কমাচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় দক্ষ ও প্রযুক্তি নির্ভর জনগোষ্ঠি তৈরীর জন্য কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে গত ৩ বছরে পাচঁ শতাধিক শিক্ষার্থীকে তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দিয়েছে এসজে।
প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার শাহেরা চৌধুরী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শুধু আকার বাড়েনি, সেবা প্রদানের মান বেড়েছে বহুগুন। একদিকে মেধায়-প্রজ্ঞায় আমরা নিজেদের আরও বিকশিত করে তুলছি, অন্যদিকে পেশাগতভাবেও আমরা পৌছুতে পেরেছি এক ভিন্ন উচ্চতায়। এই অর্জন আমাদের আরো দায়বদ্ধ করে তুললো সেবা গ্রহিতাদের কাছে।
এসজে ইনোভেশন একটি নিউইয়র্ক ভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি, যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে সফটওয়ার সমস্যার জন্য কাস্টমাইজড সমাধান খুজেঁ পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্সে বিশেষজ্ঞ, এবং সবই তাদের দক্ষ-অভিজ্ঞ কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে এবং ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড সফটওয়্যার (বেসিস) এর সদস্য এই প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, ইন্ক ম্যাগজিন পৃথিবীর অন্যতম বিশ্বস্থ একটি বিজনেস জার্নাল। যা নতুন উদ্যোক্তা তৈরী এবং ব্যাবসায় সফলতা, তথ্য প্রযুক্তি বিসয়ক সংবাদ-ফিচার-নিবন্ধ সহ কৌশলগত ব্যবসায়িক দিক নির্দেশনা উপস্থাপন করে থাকে। প্রভাবশালী এ ম্যাগজিনের ম্যাটেরিয়েল প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়নেরও বেশী পাঠক-দর্শকদের কাছে পৌছে ওয়েবসাইট, নিউজলেটার, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্রডকাস্ট এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে। ইন্ক-৫০০০ নামের মর্যাদাপূর্ণ এই বর্ষ তালিকাটি ১৯৮২ সাল থেকে প্রকাশ করে আসছে।