‘ট্রাম্পের বিতাড়িত’ সেই বাংলাদেশি নারী এখন হোয়াইট হাউসে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ৬:১৭:১৩
তার বাবা ১৯৭৮ সালে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। মা দেশটিতে একটি দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে নিজের উদ্যোগে একটি ডেকেয়ার সেন্টার চালু করেন। বাবা ব্যাংক অব আমেরিকায় লেটনাইট কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরে একটি শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রমোশন পান। রুমানার বাবার স্বপ্ন ছিল পিএইচডি করবেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালে তার সেই স্বপ্ন থেমে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় একটি গাড়ি তার বাবার প্রাণ নিয়ে নেয়!
রুমানা জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরপর বারাক ওবামার প্রশাসনে যোগ দেন। সাবেক প্রেসিডেন্টের আমলে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে কাজ করতে থাকেন।
রুমানা তার সেই আলোচিত কলামে জানান, ওবামা ক্ষমতা ছাড়লে হোয়াইট হাউসে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। সপ্তাহ পার হতে না হতে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।
‘আমার কাজ ছিল দেশের সেবা করা। ওয়েস্ট উইংয়ে আমি ছিলাম একমাত্র হিজাবী। ওবামা প্রশাসন সব সময় আমাকে স্বাগত জানিয়েছে,’ রুমানা কলামে লিখেছেন, ‘অন্য মুসলিমদের মতো ২০১৬ সালে আমিও ট্রাম্পের কাজকর্ম দেখতে থাকি। আমি ভেবেছিলাম, দেশের জন্য তার প্রশাসনে আমার থাকা উচিত।’
‘আমি আটটা দিন টিকতে পেরেছিলাম।’
‘ট্রাম্প যখন সাতটি মুসলিম-প্রধান দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন, তখনই বুঝে যাই আমার আর সময় নেই। ভাবতে থাকি, এমন একটা প্রশাসনে কাজ করি, যারা আমাকে অধীনস্থ নাগরিক মনে করে, হুমকি হিসেবে দেখে।’
রুমানা বলেন, ২০১৬ সালের পরিস্থিতি তার কাছে ৯/১১’র মতো মনে হচ্ছিল। মুসলিম হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ তাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। অনেকে কথা বলতে চাইত না।
‘আমি ১২ বছর বয়স থেকে হিজাব ব্যবহার শুরু করি। পরিবার আমাকে উৎসাহিত করলেও এটা আমার নিজেরই পছন্দ ছিল। এটা ছিল আমার বিশ্বাসের, সত্তার এবং সহনশীলতার প্রতীক।’
‘‘৯/১১ হামলার পর সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে স্কুলে শিশুরা পর্যন্ত আমাকে অন্যরকম ভাবতে শুরু করে। মানুষ আমাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে ডাকত। বলত, নিজের দেশে ফিরে যাও।’’
সংখ্যালঘু রুমানা এত বঞ্চনা সহ্য করতে পারতেন বাবার শেখানো ইসলামিক বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে। তার বাবা বাংলায় বলতেন, ‘কেউ যখন তোমাকে ফেলে দেবে, উঠে দাঁড়াবে। দুহাত মেলে তাকে ভাই বলে ডাকবে।’