যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের কার্গো ব্যবসা বাঁচাতে তিন দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২০, ৩:৫৬:৫১
মহামারি করোনা এবং করোনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের কাস্টমস বিভাগের অপ্রয়োজনীয় কঠোরতায় মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কার্গো ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের কাস্টমস বিভাগের কড়াকড়ির কারণে গত মার্চ থেকে বাংলাদেশে কার্গো সার্ভিসের মাধ্যমে মালামাল পাঠানো বন্ধ রয়েছে। কার্গো সার্ভিস বন্ধ থাকায় ব্রিটেন এবং বাংলাদেশ মিলে প্রায় ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের চাকরি রক্ষায় বাংলাদেশের সরকারকে করোনার সময়ে কাস্টম বিভাগের নিয়ম শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের কার্গো ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে পূর্বলন্ডনের ব্রিকলেনের একটি রেস্টুরেন্টে অল-ব্রিটিশ বাংলাদেশি কার্গো অ্যাসোসিয়েশনের (এবিবিসিএ) উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, মহামারি এবং বাংলাদেশের কাস্টমস বিভাগের অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে যুক্তরাজ্য থেকে মালামাল পাঠানো বন্ধ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হলো :
১. কোভিড-১৯ মাথায় রেখে প্রবাসীদের স্বার্থ বিবেচনায় সহজশর্তে মালামাল পাঠানো এবং খালাসের ব্যবস্থা নেয়া।
২. পার্শ্ববর্তী দেশের বসবাসরত প্রবাসী নাগরিকরা সহজেই শুল্ক করাদি আদায়পূর্বক মালামাল তাদের নিজের দেশে পাঠাতে পারলেও নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিরা এ সুযোগ পাচ্ছেন না। সহজশর্তে এবং সুলভে শুল্ক করাদি আদায়পূর্বক বাংলাদেশে মালামাল পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. প্রবাসী এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে অতি শিগগির কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া। এক্ষেত্রে দেশ ও প্রবাসের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃকে নিয়ে এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে একটি টার্সফোর্স গঠন করা।
সংবাদ সম্মেলনে এবিবিসিএ’র পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ও জেএমজি এয়ার কার্গোর এমডি মো. মনির আহমেদ। সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি মিটু পাল, প্রেসিডেন্ট মো. মিজানুল হক (আদিল)।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে মালামাল পাঠাতে সহজেই শুল্ক ও কর পরিশোধ করে মালামাল পাঠানো গেলেও যুক্তরাজ্য-প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ সুযোগ পাচ্ছেন না।
কার্গো ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে প্রবাসের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে একটি টাক্সফোর্স গঠন করার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে যে বেশ কয়েক টন কার্গো পণ্য কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ জব্দ করেছে, এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কার্গো বসসায়ীরা জড়িত নন।
যুক্তরাজ্য থেকে বর্তমানে কিছু কিছু বাণিজ্যিক কার্গো সার্ভিস চালু থাকলেও সাধারণ যাত্রী ও প্রবাসীদের জন্য কার্গো আবার কবে শুরু হবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কার্গো ব্যবসায়ীরা।
লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের অন্যতম একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হচ্ছে কার্গো ব্যবসা। ব্রিটেনে প্রত্যক্ষভাবে এ ব্যবসায় জড়িত আছেন প্রায় হাজারের ওপরে মানুষ। বাংলাদেশ এবং ব্রিটেনের মধ্যে এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষের। ব্রিটেনে বাংলাদেশি মানুষের জন্য কার্গো পাঠানো নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি বিষয়। দেশে প্রিয়জনের কাছে মালামাল পাঠানো এমনকি দেশে থাকা আপনজনের প্রয়োজনীয় আবদার মেটাতে কার্গো একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাশাপাশি প্রবাসীদের সঙ্গে দেশের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে এটি।
প্রতিমাসে প্রায় শত শত টন পণ্য বাংলাদেশে যায় ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মাধ্যমে। এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। আর এতে করে প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা পড়ে কোটি কোটি টাকা। সেইসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লাভবান হচ্ছে। কার্গো ব্যবসায়ীরা শুধু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয় কমিউনিটির মানুষকে সেবা প্রদানের জন্য তা পরিচালনা করে থাকেন। দুঃখজনক হলেও সত্য গত প্রায় পাচ মাস ধরে কার্গো ব্যবসায়ীরা দেশে মালামাল পাঠাতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করার পরে ব্যবসা বন্ধ হলেও লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও কোভিড-১৯ এর কারণে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেকেই দেশে যাচ্ছেন না। ফলে মালামালও পাঠাতে পারছেন না। এমতাবস্থায় ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কঠিন সময় পার করছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, প্রবাসী কমিউনিটি তাদের প্রিয়জনের কাছে মালামাল পাঠাতে না পেরে হতশাগ্রস্ত । কোভিড-১৯ এর কারণে এমনিতেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক আর তাই এমন কঠিন সময়ে আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাঠছে অনিশ্চিয়তায়। প্রতিদিন আমাদের অফিসে শত শত প্রবাসীর ফোনকল রিসিভ করতে হচ্ছে। প্রবাসীদের ইনকুয়ারি একটাই, কবে আমাদের পণ্য যাবে? কখন পাঠানো হবে? কবে পাঠানো যাবে? আমাদের কাছে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।