সিলেটে ভোজনবাড়ি সিলগালা, পাঁচভাই-পানসীকে জরিমানা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২১, ৬:৪৪:০৩
সিলেটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগে তিন রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আগে কয়েক দফার অভিযানে জরিমানা করা হলেও এবারে নগরীর জিন্দাবাজারের ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ভোজনবাড়ি বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টের তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯। এছাড়া পঁচা ও বাসি খাবার পরিবেশন ও রেস্টুরেন্টে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভিযোগে একই এলাকার পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে বিকেল ৫টার দিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিক-কর্মচারীরা। এ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন নগরীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিক-শ্রমিকসহ ব্যবসায়ী নেতারা।
এতে জিন্দাবাজারের সবকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিলেট চেম্বারের সহ-সভাপতি ও নগরীর অভিজাত একটি হোটেলের মালিক তাহমিন আহমদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মুক্তির দাবিতে সবাই রাজপথে নেমেছে। তাদের মুক্তি না দিলে বুধবার থেকে নগরীর সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শান্ত দেব জানান, লকডাউন পরবর্তী সময়ে এখনও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এরমধ্যে রয়েছে ভ্যাট ও ট্যাক্সের বোঝা।
তিনি বলেন, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা যখন ধুঁকছে, তখন অভিযানের নামে মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। কোনো রেস্টুরেন্টে সমস্যা থাকলে জরিমানা হতে পারে। কিন্তু সিলগালা করার বিধান নেই। এতে বোঝা যায় রেস্টুরেন্ট মালিকদের হয়রানি করতে এ রকম অভিযান করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অভিযান বন্ধ, সিলগালা করা রেস্টুরেন্ট খুলে দেওয়া ও আটক কর্মচারীদের মুক্তির দাবিতে বুধবার থেকে সিলেটের সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলতে থাকবে।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিক-কর্মচারীরা, ছবি: সমকাল
এ পরিস্থিতিতে সিলেট চেম্বারের হলরুমে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, চেম্বার সভাপতি এটিএম শোয়েব, সিলেট রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি ও সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ সভায় বুধবার থেকে সব রেস্টুরেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের পাশাপাশি সকালে রেস্টুরেন্ট মালিক ও কর্মচারীদের শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌঁনে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সড়ক অবরোধ করে হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিক-শ্রমিকরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে আগত র্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় রেস্টুরেন্টে পঁচা ও বাসি খাবার পাওয়া যায়। এমনকি ২০১৯ সালের পর রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। খাবার পরিবেশন সংক্রান্ত বৈধ কোনো কাগজপত্রও নেই। এরপর পার্শ্ববর্তী পানসী রেস্টুরেন্ট ও পাঁচভাই রেস্টুরেন্টকে ৮০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা অভিযানে র্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামিউল ইসলাম, সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক স্নিগ্ধেন্দু সরকার, বিএসটিআই পরিদর্শক আব্দুল মতিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নগরীর তিনটি রেস্টুরেন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শেষে র্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ভোক্তাদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এটি নিয়মিত অভিযান।
তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এখানে অভিযানে এসে আমরা খাদ্যের মানে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছি। এমন অনেক খাদ্য পেয়েছি, যেগুলো দুই থেকে তিন দিন আগের। এছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন নেই, খাবার পরিবেশনের বৈধ কাগজপত্র নেই। সবকিছু মিলে আমরা সাময়িক সময়ের জন্য রেস্টুরেন্টটি বন্ধ করে তাদের সময় দিয়েছি। আপাতত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেস্টুরেন্টের দুইজনকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।