মই দিয়ে সেতু পারাপার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৫, ৮:৩১:৫৩
নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি : ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে এলজিইডির অধীনে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচে বালি ভরাট ও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় মই দিয়ে সেতু পার হচ্ছেন দুই ইউনিয়নের মানুষ।
উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের মজকুনী গ্রামের বাইতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত হয়েছে এ সেতু। উপজেলার সুবিদপুর ও কুশঙ্গল দুই ইউনিয়নের সংযোগ সেতু এটি।
এক বছর আগে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারকে কাজের বিলও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন হলেও সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়কের কাজ করা হয়নি।
এতে দুই ইউনিয়নের (সুবিদপুর ও কুশঙ্গল ইউপি) মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারী ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন রোববার (১৮ মে) জানা গেছে, ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর একান্ত ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম তালুকদারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স সেতুর নির্মাণ কাজ করে।
এক বছর আগে নির্মিত এ সেতুর অ্যাপ্রোচের বালি ভরাটের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। এতে জনদুর্ভোগে পড়েছেন এ পথে চলাচলকারীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (এলজিইডি, নলছিটি) এ ব্যাপারে চরম উদসীন থাকলেও বিল পরিশোধে ভুল করেননি। এদিকে গত বছরের ৫ আগস্টের পরে ওই ঠিকদারকে দেখা যাচ্ছে না।
সেতুটি একদিকে সুবিদপুর ইউনিয়নের বাইতারা, অন্যদিকে কুশঙ্গল ইউনিয়নের সরমহল গ্রামকে যুক্ত করেছে। সেতুর সামনে রয়েছে বাইতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ শত শত পথচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো বেয়ে সেতুতে উঠানামা করছেন। এতে অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ।
বাইতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা. হাওয়া আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুর অ্যাপ্রোচের বালু ভরাটের কাজ এভাবেই ফেলে রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে।
তালতলা বিজি ইউনিয়ন একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র সোহান হাওলাদার জানায়, সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে এক বছর আগে, অথচ আমরা এখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওঠানামা করি। এটি খুব বিপজ্জনক।
এলাকাবাসী জানান, তালতলা বাজার এ অঞ্চলের অন্যতম বড় বাজার। প্রতিদিন সেতু পার হয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে এ বাজারে আসা-যাওয়া করতে হয়; কিন্তু সেতুর দুই দিকের অ্যাপ্রোচ না থাকায় ভ্যান বা অন্য যানবাহনে মালামাল নিয়ে পার হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে তাদের।
নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীর বলেন, ঠিকাদারকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে আমি কাজের স্থান পরিদর্শনে যাব। এ ব্যাপারে কোনো রিপোর্ট দিয়েন না।
সেতুর অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ না হওয়ার আগে কাজের সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করলেন কিভাবে? জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সিকিউরিটি মানি এখনো রয়েছে। এটি কত টাকার কাজ-এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তা আমি বলতে পারব না। এসএই (সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট) ইঞ্জিনিয়ার মইনুল আজমের সঙ্গে কথা বলেন।
এসএই (সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার) মইনুল আজম বলেন, সেতুর অ্যাপ্রোচে দ্রুত বালি ভরাট করিয়ে দেওয়া হবে। সেতুটি নির্মাণে ৪০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এখন (১৯ মে সোমবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট) অফিসে নেই। ছুটিতে যশোরের বাড়িতে যাচ্ছি। কাগজ না দেখে সঠিক কিছু বলতে পারব না। এ ব্যাপারে পত্রিকায় রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।