সিলেটের নাজিরবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ শ্রমিক নিহত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুন ২০২৩, ১০:৩৭:৩৭
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নাজিরবাজারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (৭ জুন) দুপুরে নিহতদের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জেলা প্রশাসন নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার ভোরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে কুতুবপুর এলাকায় বালুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবহনকারী পিকআপের সংঘর্ষে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে এক নারীসহ ১১ জন মারা যান। হাসপাতালে আনার পর আরও তিনজন মারা যান। বিকেলে এ ১৪ মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহতরা হলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার হলদিউড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫), নেত্রকোনার বারোহাট্টা উপজেলার দশদার গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ মিয়া (৪৬), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁও গ্রামের মৃত ওয়াহাব মিয়ার ছেলে শাহিন মিয়া (৫০), একই উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের হারুণ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬), তলেরবন্দ গ্রামের মৃত আমান উল্লাহর ছেলে আউলাদ তালুকদার (৫০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৫০), একই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৬), একই গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া (১৯), মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৬০), সাগর আহমদ (১৮), উপজেলার মধুপুর গ্রামের মৃত সোনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া (৪০), গছিয়া গ্রামের মৃত বারিক উল্লাহর ছেলে সিজিল মিয়া (৩৫), কাইমা গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫)। হতাহতদের সকলেই নির্মাণশ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে।
দুপুরে মরদেহ হস্তান্তরকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহত-নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। হাসপাতালের হিমঘরের পাশে স্বজনদের ভিড় লেগে আছে। মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদছেন তাদের অনেকে।
হিমঘরের পাশে মাটিতে বসে আহাজারি করছিলেন মেহের মিয়ার স্ত্রী চাঁদনী বেগম। তিনি বলেন, ‘সকালে ডিম রান্না করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে না খেয়েই চলে যায়। এখন আমার বাচ্চাগুলো এতিম হয়ে গেল। আমি টাকা চাই না। বাচ্চাদের বাবাকে চাই।’
কাঁদতে কাঁদতেই চাঁদনী বেগম বলেন, ‘গরমে কাল রাতে ঘুম আসছিল না। রাত ২টার দিকে সে আমারে ডাক দেয়। বলে, তোর জন্য একটা ফ্যান কিনে দেবো। আমারে আর ফ্যান কিনে দিতে পারলো না।’
সিলেট নগরের আম্বরখানা বড়বাজার থেকে পিকআপে (সিলেট-ন ১১-১৬৪৭) করে প্রায় ৩০ জন নির্মাণশ্রমিক (নারীসহ) জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-০৭৮০) সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়।