কাশ্মীরে বাংলাদেশী পর্যটকের ঢল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মে ২০২৩, ৮:১৫:৩৫
■ সুনীল সিংহ ■
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এখন বাংলাদেশী পর্যটকের ভিড় বেড়ে গেছে। অতীতের সব রেকর্ড পেছনে চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই ৪৮ হাজারেরও বেশি পর্যটক শ্রীনগরে গেছেন বলে খবরে প্রকাশ। কাশ্মীরের পর্যটন বিভাগ জানাচ্ছে, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো থেকে চলতি ২০২৩ সালে কাশ্মীর ভ্যালিতে পর্যটক এসেছেন হাজার সাতেক। ফলে একা বাংলাদেশ থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় প্রায় সাতগুণ বেশি পর্যটক এ বছরে কাশ্মীরে বেড়াতে গেছেন।
শ্রীনগরে পর্যটন বিভাগের কর্মকর্তারা এমনও বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে তাদের রাজ্যে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা হয়তো একদিন দেশি (ভারতীয়) পর্যটকদেরও ছাপিয়ে যাবে। বাংলাদেশিদের মধ্যে কাশ্মিরের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও দারুণ খুশি। এতদিন ভারতে হিমালয়ের দার্জিলিং বা সিকিম অঞ্চলেই বাংলাদেশি পর্যটকদের বেশি আনাগোনা ছিল। কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বিধায় বিদেশিরা শ্রীনগর বা আশপাশের এলাকাগুলো এড়িয়েই চলতেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে।
দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আমরা পর্যটন ভিসার জন্য যেসব আবেদন পাচ্ছি তার একটা বড় অংশ, প্রায় পঁচিশ শতাংশের মতো কাশ্মিরে যেতে চাইছেন। গত বছর থেকেই বাংলাদেশে ভারতের ভিসা দেওয়ার হারও অনেক বেড়ে গেছে।
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর সেখানে পরিস্থিতি অনেক শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবং জঙ্গি তৎপরতা কমেছে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যে দাবি করে থাকেবিদেশি পর্যটকদের এই ঢল সেই বক্তব্যের সঙ্গেও সাযুজ্যপূর্ণ।
ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা আতিকুজ্জামান স্বপন গত এপ্রিল মাসের গোড়াতেই শ্রীনগর-গুলমার্গ-পহেলগাম-সোনমার্গ ঘুরে গেছেন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে। দিল্লী থেকে দেশে ফেরার আগে তিনি বলছিলেন, ‘এটা আচমকা কিছু নয়। এই উপমহাদেশের প্রত্যেক মানুষেরই বোধহয় স্বপ্ন জীবনে একবার অন্তত ভূস্বর্গ কাশ্মীর ঘুরে আসা। তবে এতদিন আমাদের সেই সুযোগ ছিল না, পরিবেশে একটা আতঙ্কও ছিল। এখন সেসব অনেকটা কেটে গেছে বলেই গোটা ফ্যামিলি নিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করে গেলাম।’
ঢাকার আরেক বাসিন্দা মিজানুর রহমান সোহেলও বন্ধুদের একটি গ্রুপ নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন মার্চ মাসে। ‘কাশ্মির ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যে কী অবিস্মরণীয় ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা তো ছেড়েই দিলাম, হোটেলের কর্মী থেকে হাউজ বোটের চালক, ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে ট্যুরিস্ট গাইড, সবাই যেভাবে আমাদের আপ্যায়ন করেছেন তা ভোলার নয়। মনে হচ্ছিল তারা যেন আমাদের অপেক্ষাতেই এতদিন বসে ছিলেন।’ কাশ্মিরে বেড়াতে আসা হাজার হাজার বাংলাদেশির কেউ মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয়দের আতিথেয়তায়, কেউ বা ভ্যালির অনিন্দ্য সুন্দর নিসর্গে। প্রতি মাসেই উপত্যকায় ওই পর্যটকদের সংখ্যা যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, এতে বোধহয় তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।