রাশিয়া গ্যাস বন্ধ করে দেওয়ায় এবার ইউরোর রেকর্ড দরপতন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৮:২৯:৫১
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর চরম মূল্য দিতে হচ্ছে ইউরোপকে। রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে ইউরোপের শেয়ার বাজারে। এ ছাড়া গত ২০ বছরের মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইউরোর সবচেয়ে বড় দরপতন হয়েছে।
সোমবার ডলারের বিপরীতে ইউরোপের কমন মুদ্রা ইউরোর দাম ০.৯৯ এ নেমে আসে। ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসের পর যা সর্বনিম্ন। যুক্তরাজ্যের পাউন্ডেও দরপতন দেখা গেছে। জার্মানি ও ফ্রান্স দুই দেশেই শেয়ারের দরপতন হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কিছুটা ঠিক হয়।
এছাড়া ইউরোপে রকেট গতিতে বাড়ছে গ্যাসের দাম। মাত্র দুদিনেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গ্যাসের দাম ৩০% বেড়ে গেছে।
আগামী মাসে (অক্টোবরে) সরবরাহ করার জন্য হল্যান্ডের গ্যাসের দাম সোমবার ৩০% এবং ব্রিটেনের গ্যাসের দাম ৩৫% বেড়ে যায়। হল্যান্ডের গ্যাসের দামকে ইউরোপের বাজারে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়।
গত শুক্রবার রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপ লাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। প্রথমে কারিগরি ত্রুটির কথা জানালেও সোমবার রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
ওদিকে, সোমবার রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী সংগঠন ওপেক প্লাস ঘোষণা দেয় তারা অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে। দাম বাড়ানোর জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, যদি রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে ইউরোপে গ্যাস দেবে না তারা।
রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেছেন, আমাদের একাধিক কোম্পানির ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গ্যাস পাম্প করতে সমস্যা হচ্ছে। গ্যাস পাম্প করার ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে না।
এ বক্তব্যের মাধ্যমে দিমিত্রি পেসকোভ পরিস্কারভাবে বলেছেন, রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা না তুলে দিলে ইউরোপে গ্যাস পাঠাবেন না তারা।
বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানিতে যাওয়া নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ করা গ্যাসের প্রবাহ যুদ্ধ শুরুর পরই ৮০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল রাশিয়া। গত সপ্তাহে রক্ষণাবেক্ষণের নামে রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস পাঠানোর এই সরবরাহ লাইন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। রাশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম শনিবার থেকে তা চালুর কথা বললেও পরে তা বাতিল করে দিয়েছে। এখন তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। এ ছাড়া ইউক্রেনের ওপর দিয়ে যাওয়া গ্যাস পাইপলাইন দিয়েও গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া।
গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই ইউরোপের জনগণের নাভিশ্বাস উঠছিল এবং অনেক শিল্প কারাখানাও তাদের উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ডে গ্যাসের সরবরাহ এর মধ্যেই বন্ধ করেছে রাশিয়া। অন্যান্য পাইপলাইনেও সরবরাহ কমিয়েছে। ফলে শঙ্কিত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। পশ্চিমা দুনিয়া রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এক সময় পাল্টা গ্যাসের জোগান বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মস্কো। অবশেষে তাই করলো রাশিয়া।
ওদিকে, গ্যাসের দাম বাড়দে থাকায় আগামী শীত মৌসুম নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছে পুরো ইউরোপ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, গ্যাসের দাম কমানো না গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে আগামী পাঁচ অথবা দশ বছর ধরে শীতকালে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। যার ফলশ্রুতিতে রাশিয়া বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
জ্বালানি সংকটের জেরে ইউরোপে বিদ্যুতের দামও এবং মূল্যস্ফীতিও রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম একটি উৎস গ্যাস। আগস্টে ইউরোপীয় অঞ্চলের ১৯টি দেশের মূল্যবৃদ্ধির হার জুলাইয়ের ৮.৯% থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.১%।
এদিকে ইউরোপ যখন জ্বালানির জন্য হাহাকার করছে, রাশিয়া তার উদ্বৃত্ত গ্যাসের মজুত পুড়িয়ে ফেলছে। ফিনল্যান্ডের সীমান্তের কাছে অবস্থিত পোর্তোভায়া নামের একটি প্ল্যান্টে দৈনিক এক কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া পুড়িয়ে যে গ্যাস নষ্ট করছে তা আগে জার্মানিতে রপ্তানি করা হতো। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত মিগুয়েল বার্গার বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া অন্য কোথাও গ্যাস বিক্রি করতে পারছে না বলেই গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে।