পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২২, ৭:৩৪:৩৮
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন ধরে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি নদীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সোমবার বিকেল ৪টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার, ছাতক পয়েন্টে ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে যাদুকাটার পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, বড়পাড়া, সাহেববাড়ি ঘাট, পুরানপাড়ার সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে যাতে মোকাবিলা করা যায় এজন্য আগাম প্রস্তুতি রেখেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার সুনামগঞ্জ জেলার ৪ পৌরসভাকে ২৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌরসভাকে ৭.৫, ছাতক পৌরসভা ৭.৫, জগন্নাথপুর পৌরসভা ৫ ও দিরাই পৌরসভাকে ৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা ডুবন্ত সড়ক ডুবে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ, ফতেপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণ বাধাঘাটসহ দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাদি উর রহিম জাদিদ জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ২০ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ পেয়েছি।
তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সড়ক ডুবে গিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর উপজেলার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের বাসিন্দা আলী হায়দার বলেন, একবার বন্যায় এসে ঘর বাড়ি তছনছ করে দিয়েছে। কোনোরকম ঘর পুনরায় নির্মাণ করেছি। কিন্তু আবারও বন্যার পানি ঘরের ভেতরে এখন কীভাবে কী করি।
তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুরের ব্যবসায়ী রাহি মিয়া বলেন, বন্যার পানিতে আনোয়ারপুরের সড়ক ডুবে গেছে। এখন সুনামগঞ্জ শহরের সাথে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিছিন্ন। আমরা খুব ভোগান্তিতে পড়েছি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাইদুর রহমান চৌধুরী জানান, আজ থেকে আগামী তিনদিন সুনামগঞ্জে ও সুনামগঞ্জের উজানে টানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এতে আবারও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বললেন, বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার, ছাতক পয়েন্টে একই নদীর পানি ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৯০ মিলিমিটার, ছাতকে ১২০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ সদরে ৭৯ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেও মাঝারি ও হাল্কা বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং উজানেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই অবস্থা চললে পানি আরও বৃদ্ধি পাবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (১) মো. জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয়ে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সুনামগঞ্জের সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বললেন, আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চার পৌরসভাকে ২৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ২০ টন করে খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।