কারাভোগ শেষে মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ৪১ বাংলাদেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মার্চ ২০২২, ৮:১৮:১৯
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে এক নারীসহ ৪১ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার। মংডুতে বুধবার সকালে টেকনাফ ২ বিজিবি ও মিয়ানমার ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের মধ্যে পতাকা বৈঠক শেষে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা জানান। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নাফ নদী, সাগরে মাছ শিকার এবং মালয়েশিয়া যাত্রাকালে মিয়ানমারের আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে।
বিজিবি জানায়, মংডুতে সকাল ১১টায় টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখারের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কাও না ইয়ান শো-এর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ফেরত বাংলাদেশিদের মধ্য টেকনাফ উপজেলার ২২, মোলভীবাজারের ১, উখিয়ার ২, বান্দারবানের ৭, রাঙ্গামাটির ৮, খাগড়াছড়ির ১ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২-২৯ বছর সাজা ভোগ করে মিয়ানমার কারাগারে কষ্টের দিন পার করছিল।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বিকেল ৪টায় দিকে ওই ৪১ বাংলাদেশিকে নিয়ে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়া-সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাটে পৌঁছায়। এ সময় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিম তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
পরে বিকেলে জেটিঘাটে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ, টেকনাফ ২ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন মো. মাসুম রেজা, অপারেশন অফিসার লে. এম মুহতাসিম বিল্লাহ শাকিল, টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরফানুল হক চৌধুরীসহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর দুই দেশের বৈঠকের মাধ্যমে ওই ৪১ জনকে ফেরত আনা হয়। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বিজিবির অধিনায়ক শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানা অতিক্রম বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যদি জলসীমানা থেকে কোনো বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের অবিহত করে সমাধান করার জন্য বলেছি।
সবচেয়ে বেশি সাজা খেটে ফেরত আসা আইয়ুব ও করিম উল্লাহ। তারা দুজই টেকনাফ উপজেলা বাসিন্দা। সাড়ে ৪ বছর আগে সেন্টমার্টিনে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের ২৯ বছর সাজা প্রদান করলেও সাড়ে ৪ বছর সাজা শেষে তারা ফেরত আসেন।
তারা জানান, সাড়ে ৪ বছর মিয়ানমারের কারাগারে সাজা ভোগ করেছেন। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের সাজা দেওয়া হয়। সে দেশে কারাগারে অনেক কষ্ট। তারা ঠিকমতো খাবার দিতেন না। কারাগারে আরও অনেক বাংলাদেশি কষ্টের দিন পার করছেন। তাদেরও ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তারা।
২০১৮ সালে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে মিয়ানমারে বিজিপির হাতে আটক হন মোহাম্মদ আয়ুব (৪০)। তিনি জানান, তারা ৪ জন একটি ট্রলারযোগে সাগরে একটি বড় ট্রলারে ওঠার সময় ইঞ্জিন বিকল হয়ে মিয়ানমার জলসীমানায় ঢুকে পড়েছিলেন। তখন বিজিপির হাতে ধরা পড়েন। এ সময় তাদের অনেক মারধর করেছিল বিজিপি। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
সাজা খেটে ফেরত আসা দমদমিয়া এলাকার মো. সাদেক বলেন, ২০১৭ সালে মাছের ট্রলার নিয়ে তিনিসহ ছয় জেলে সেন্টমার্টিনের পূর্ব-দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বিজিপি তাদের ট্রলারসহ ধরে নিয়ে যায়।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের যাচাই-বাচাই শেষে স্ব স্ব স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।