লিস্ট ধরে বই কিনছে পাঠক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২২, ৮:১০:২২
বসন্তকালের এই ফুরফুরে সময়টাতে বইমেলায়ও যেন বসন্ত লেগেছে। মার্চ মাসের বইমেলা কেমন হবে সেই সব আশঙ্কা কাটিয়ে মেলায় এখন বইয়ের বিক্রি তুমুলে। এ যেন শীতের স্থবিরতা কাটিয়ে বসন্তের উজ্জ্বল দিনের মতো। গত দুই বছরের করোনাকালের দুঃসময় কাটিয়ে সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকরা তাই হাসছেন সুখের হাসি। মেলায় এখন যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগই বইয়ের ক্রেতা। পাঠকদের বড় একটি অংশ মেলায় বই কিনছেন লিস্ট ধরে ধরে।
শনিবার ছুটির দিনে বইমেলায় ছিল ভিড়। গত শুক্রবারের ভিড়ে বইয়ের ক্রেতা ও দর্শনাথী দুটোই মিশ্রণ ছিল। কিন্তু শনিবার সেদিক থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রম। এদিন যারা মেলায় এসেছেন তারা মূলত বইয়ের ক্রেতা। কথাপ্রকাশের প্যাভিলিয়নের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা গেল, কিছুক্ষণ পরপরই পাঠক আসছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন লিস্ট ধরে বই কিনতে। প্রকাশনাটির মেলা ব্যবস্থাপক মো. ইউনুস আলী যুগান্তরকে বলেন, অনেক পাঠক এখন আমরা পাই যারা আগে থেকেই নানা বিষয় মাথায় নিয়ে আসেন। আমাদের প্রকাশনা থেকে প্রবন্ধের বই বেশি বলে ‘ইতিহাস’, ‘রাজনীতি’বিষয়ক বইগুলো লিস্ট করে নিয়ে এসে পাঠকরা সংগ্রহ করছেন।
অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা যুগান্তরকে বলেন, আমরা মেলা উপলক্ষ্যে এক হাজার ক্যাটালগ বিলি করেছি। আশা করছি এর মধ্যে অন্তত ২০০ জন ক্যাটালগ সঙ্গে করে বই কিনতে আসবেন। ইতোমধ্যে সেটি শুরু হয়ে গেছে। মেলা যেহেতু এখন শেষ সময়ের দিকে যাচ্ছে সেহেতু পাঠক এখন লিস্ট ধরে ধরেই বই কিনতে আসছে। অবসর থেকে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস সমগ্র ২২ খণ্ড পূর্ণাঙ্গভাবে এবার মেলায় এসেছে। এর মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের সব উপন্যাসের সংকলন সমাপ্ত করল অবসর। আজকেও (শনিবার) আমরা এই উপন্যাস সমগ্রের পুরো সেট কয়েকটি বিক্রি করেছি।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, প্রচুর পাঠক এখন লিস্ট ধরে ধরে বই কিনছেন। এ ধরনের পাঠক-ক্রেতাই এখন বেশি। আমাদের প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত ৩৫ খণ্ডে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচনাবলি পাঠকদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে।
শনিবার ইউপিএল, আগামী, অন্যপ্রকাশ, সময়, প্রথমা, পাঞ্জেরী, অন্বেষা, ইত্যাদি, বাতিঘর, অনন্যা, কাকলী, উৎস, দিব্য, বিদ্যা, পুথিনিলয়, অ্যাডর্ন, শোভাসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রকাশনার প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরেও দেখা গেছে বইয়ের বিক্রির হিড়িক। সেখানেও লিস্ট ধরে ধরে পাঠকরা বই কিনছেন। মেলায় এদিনও সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।
রেজাউল হোসেনের ‘ওয়্যারলেস টু ক্যাশলেস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন : এদিন বইমেলায় মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ‘উপায়’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল হোসেন রচিত ‘ওয়্যারলেস টু ক্যাশলেস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হলো। এদিন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আদর্শ’র স্টলে বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়।
বাংলাদেশের টেলিকম ও এমএফএস ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার ২৬ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখক এই বইতে নব্বইয়ের দশকের ওয়্যারলেস ফোন থেকে বর্তমানের ক্যাশলেস অর্থ ব্যবস্থায় বিবর্তনের চালচিত্র তুলে ধরেছেন। বইটি বিজনেস স্টাডিজের শিক্ষার্থী কিংবা করপোরেট পেশাজীবীদের গভীর অন্তর্দৃষ্টি খুলে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের টেলিকম ও এমএফএস ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে সাধারণ পাঠকদের নানা কৌতূহল মেটাবে।
মঞ্চের আয়োজন : বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : কাজী মনজুরে মওলা ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, আসাদ মান্নান এবং সাহেদ মন্তাজ। সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।
আলোচকরা বলেন, বাংলা কবিতার ইতিহাসে কবি মনজুরে মওলা ও কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কবিতা যে স্থায়ী আসন অর্জন করেছেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যক্তিমানুষ হিসাবে মনজুরে মওলার রসবোধ ও সহজ-সরস সাহচর্য ছিল সবার উপভোগ্য। অন্যদিকে কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ছিলেন সদাহাস্য, উদারচিত্ত ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। আমাদের মণিকোঠায় এ দুজন বরেণ্য মানুষ তাদের সৃষ্টিশীলতার গুণে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন বিমল গুহ এবং শাহেদ কায়েস।
অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি ঝর্না রহমান এবং ইমরুল ইউসুফ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল ‘কাশফুল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন সাইদুর রহমান বয়াতী, আমিরুল ইসলাম, সঞ্জয় কুমার দাস, নাজমুল করিম মানিক, রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং শারমিন সুলতানা, শিমু দে।
নতুন বই : শনিবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ১২৯টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে কথাপ্রকাশ থেকে সৈয়দ আজিজুল হকের ‘মন ও মনন’, আনিসুল হকের ‘গুড্ডুবুড়া-৩’, একই প্রকাশনা থেকে সালেক খোকনের ‘সমতলের বারো জাতি’, সময় প্রকাশন থেকে দিলীপ চক্রবর্তীর ‘সক্রেটিস থেকে কার্ল মার্কস, মহাত্মা গান্ধি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁহাদের স্মরণীয় বিচার কথা’, প্রথমা থেকে জাভেদ হুসেনের ভাষান্তরে ‘মওলানা রুমির কবিতা’। ঐতিহ্য থেকে এসেছে ঝর্না রহমানের গল্পগ্রন্থ ‘সমাধি প্রাঙ্গণে দুই বোন’ ও নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের কাব্যগ্রন্থ ‘কুসুমের দেশে সন্ধ্যা চিরদিন’, শব্দশৈলী থেকে এসেছে ড. সুলতান মাহমুদের বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ‘নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু : ভাষা-আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ’, অন্বয় প্রকাশ থেকে এসেছে বিমল সরকারের কাব্যগ্রন্থ ‘সৃষ্টি তোমার বড় উপহার’, অনন্যা থেকে এসেছে গোলাম মাওলা রনির গবেষণা ‘আজকের দিনে যদি হতেম প্রধানমন্ত্রী’, পঙ্খিরাজ থেকে এসেছে ফারুক নাওয়াজের কিশোর কবিতা ‘স্বদেশ প্রকৃতির ছড়া কবিতা’, ঝিঙে ফুল থেকে এসেছে ফররুখ আহমদের শিশুসাহিত্য ‘শিশুকিশোর সমগ্র’।