জাতিসংঘে ভারত ও পাকিস্তানের ‘ঝগড়া’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৯:০১:১৪
ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে জাতিসংঘে ‘ঝগড়া’ করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মুসলিমদের ওপর ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করার অভিযোগ করে কঠোর তিরস্কার করেন।
পাকিস্তান নিয়মিতভাবেই জাতিসংঘে ভারতকে কটাক্ষ করে। কিন্তু শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ইমরান খান এর ভাষণ অনেক বেশি কড়া ছিল, কারণ তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ‘ভারতকে মুসলমানমুক্ত’ করার ভয়াবহ পরিকল্পনার অভিযোগ এনেছেন। এদিন ইমরান খানের ভাষণ ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রচারিত একটি পূর্ব রেকর্ডকৃত বক্তৃতায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক ইসলামভীতি এবং ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাতদের দেশের মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন’ সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
কিন্তু ইমরান খান তার কঠোরতম শব্দগুলো ভারতের জন্য ব্যবহার করেন। মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে আখ্যা দেন ইমরান খান।
ইমরান খান তার বক্তব্যে বলেন, ‘ইসলামভীতির সবচেয়ে খারাপ এবং সর্বাধিক বিস্তৃত রূপ এখন ভারত শাসন করছে’।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আরএসএস-বিজেপি শাসনের প্রচারিত বিদ্বেষপূর্ণ হিন্দুত্ববাদী আদর্শ ভারতের ২০ কোটি শক্তিশালী মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ভয় ও সহিংসতার রাজত্ব চালু করেছে’।
ইমরান খান মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কথাও উল্লেখ করেন, যা একটি শতাব্দী প্রাচীন আধা সামরিক হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন।
মোদীর অধীনে ভারত তার একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করেছে, নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ধাক্কা দিয়েছে যাকে সমালোচকরা বৈষম্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। যার ফলে ধর্মভিত্তিক সহিংসতা ঘটেছে।
যেদিন মোদি হোয়াইট হাউস পরিদর্শন করছিলেন সেদিনের কথা বলতে গিয়ে ইমরান খান অভিযোগ করেন যে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক স্বার্থ থাকায় যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়েও ‘সম্পূর্ণ দায়মুক্তি দিচ্ছে’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গত ৮ মাসে একবারও ইমরান খানের সঙ্গে কথা বলেননি।
ভারত প্রায়ই এই বিশ্ব সংস্থায় পাকিস্তানের বক্তব্য উপেক্ষা করলেও এদিন ফ্লোরে থাকা একজন ভারতীয় কূটনীতিক ইমারান খানের কথার জবাব দেন।
ভারতের জাতিসংঘ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবে নামের ওই কূটনীতিক পাকিস্তানকে আল-কায়েদার মাস্টারমাইন্ড বলে আখ্যায়িত করে ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শহর অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন।
স্নেহা দুবে বলেন, ‘এই দেশটি আগুন নেভানোর ছদ্মবেশে আগুন জ্বালায়’।
‘পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের লালনপালন করে এই আশায় যে তারা শুধু তাদের প্রতিবেশীদের ক্ষতি করবে’।
তিনি পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পাশাপাশি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময় তাদের ‘ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ তুলে ধরেন।
দুবে বলেন, ‘ভারত পাকিস্তানের মত নয় বরং একটি বহুত্ববাদী গণতন্ত্র, যেখানে সংখ্যালঘুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের সর্বোচ্চ পদে রয়েছে’।
দুবে কাশ্মীরকে ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা বলায় পাকিস্তানের কূটনীতিক সায়মা সলিম প্রতিবাদ করে উঠেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের একদিন পর শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।