করোনায় কমে যায় মাথার মগজ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৮:৫০:৫৩
করোনা মহামারীর ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে গবেষকরা মানুষের শরীর এবং মস্তিষ্কে কোভিড-১৯ এর প্রভাব সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক অন্তর্দৃষ্টিমূলক তথ্য সংগ্রহ করছেন। এসব তথ্য বুড়িয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে।
টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জেসিকা বার্নার্ড বলেন, একজন জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞানী হিসেবে আমার অতীতের কাজ ছিল, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো মানুষের চিন্তাভাবনা এবং চলাফেরার ক্ষমতাকে, বিশেষত মধ্য বয়সে এবং তার পরেও, কীভাবে প্রভাবিত করে তা বোঝা। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরেও মাসের পর মাস বা তার বেশি সময় ধরেও মানুষের শরীর এবং মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে এমন আরও প্রমাণ পাওয়ার পর আমার গবেষণা দল এটি বুড়িয়ে যাওয়ার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকেও কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা অনুসন্ধানেও আগ্রহী হয়ে ওঠে।
২০২১ সালের আগস্টে কোভিড-১৯ হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের পরিবর্তন খতিয়ে দেখা নিয়ে একটি প্রাথমিক কিন্তু বড় আকারের গবেষণা স্নায়ুবিজ্ঞানীদের প্রচুর মনোযোগ আকর্ষণ করে।
ইউকে বায়োব্যাঙ্ক নামে একটি বিদ্যমান ডাটাবেজের উপর ভিত্তি করে ওই গবেষণা চালানো হয়। ওই ডাটাবেজে ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মস্তিষ্কের ছবি ও তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। তার মানে এতে মহামারীর আগের মানুষদের মস্তিষ্কের ছবি এবং তথ্যও আছে।
গবেষক দল করোনা মহামারীর আগের মানুষদের মস্তিষ্কের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করেন এবং এরপর যাদের কোভিড-১৯ হয়েছিল তাদের মস্তিষ্কের স্ক্যান করে ছবি ও তথ্য নেওয়া হয়।
যাদের কোভিড-১৯ হয়েছে তাদের সঙ্গে যাদের কোভিড-১৯ হয়নি তাদের মস্তিষ্কের তুলনা করে গবেষরা দেখতে পান যে, এই দুই ধরণের মানুষদের মস্তিষ্কের মধ্যে ‘গ্রে ম্যাটার’ তথা মগজের পরিমাণে পার্থক্য আছে। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মগজের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে, মস্তিষ্ক ছোট হয়ে গেছে।
সাধারণত মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের ‘ধূসর পদার্থের’ আয়তন বা ঘনত্বে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের কোভিড-১৯ হয়েছিল তাদের মধ্যে এই পরিবর্তন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল।
আশ্চর্যের বিষয় হল, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং যারা হালকা অসুস্থ হয়েছিলেন উভয়ের মস্তিষ্কেই সমান পরিবর্তন দেখা গেছে। তার মানে হালকা কোভিড-১৯ হলেও মস্তিষ্কে মগজের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
গবেষকরা জ্ঞানীয় কাজকর্মের পারফরম্যান্সের পরিবর্তনও পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং দেখতে পেয়েছেন যে, যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণে গতি যারা কোভিডে আক্রান্ত হননি তাদের তুলনায় কিছুটা ধীর হয়ে গেছে।
তবে এই গবেষণার ফলাফল এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি এবং এই ঘটনার সত্যতা চূড়ান্ত ভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
মস্তিষ্কে মগজের পরিমাণ কমে গেলে কী ঘটতে পারে?
মহামারীর প্রথম দিকে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি যে অভিযোগ পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি হল স্বাদ এবং গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া।
আশ্চর্যজনকভাবে, যুক্তরাজ্যের গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, কোভিড-১৯ এর ফলে মস্তিষ্কের যে অঞ্চলের ‘ধূসর পদার্থ’ বা মগজ বেশি কমেছে তার সবই ঘ্রাণ বাল্বের সাথে যুক্ত। এটি হল মস্তিষ্কের সামনের দিকের একটি কাঠামো যা নাক থেকে মস্তিষ্কের অন্য অঞ্চলে গন্ধের সংকেত প্রেরণ করে। ঘ্রাণ বাল্বের সঙ্গে টেম্পোরাল লোব অঞ্চলেরও সংযোগ রয়েছে। বার্ধক্য এবং আলঝেইমার রোগের সঙ্গেও এই টেম্পোরাল লোব এর সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে আমাদের মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অবস্থিত। স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে হিপ্পোক্যাম্পাস বুড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।
আলঝেইমারের গবেষণার জন্য গন্ধের অনুভূতিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিছু তথ্য বলছে যে, যারা এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে তাদেরও গন্ধের অনুভূতি কমে গেছে। যদিও এই কোভিড-১৯ সম্পর্কিত পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে, তথাপি কোভিড-১৯ সম্পর্কিত মস্তিষ্কের পরিবর্তন এবং স্মৃতিশক্তির মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগ অনুসন্ধান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মস্তিষ্কের এই অঞ্চলের সঙ্গে স্মৃতিশক্তি এবং আলঝেইমার রোগও সম্পর্কিত।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স