যে শহরের সবাই উড়োজাহাজের মালিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৮:১১:১১
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি শহর ক্যামেরন পার্ক। এই শহরে যারা থাকেন, তাদের সবারই রয়েছে উড়োজাহাজ। নানা প্রয়োজনে তারা যাতায়ত করেন আকাশপথে। এমনকি সপ্তাহ শেষে ছুটি কাটাতেও শহরের বাসিন্দারা বেড়িয়ে পড়েন উড়োজাহাজ নিয়েই।
বিষয়টি অবিশ্বাস্য লাগলেও এভাবেই এই শহরের বাসিন্দারা যাতায়ত করছেন বছরের পর বছর ধরে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি এমন এক শহর যেখানে অলি-গলি, ছোট-বড় রাস্তা বলে কিছুই নেই। একটাই পথ। তার গোটাটাই রানওয়ে। শহরকে দু’ভাগে ভাগ করে সেই রানওয়ে এসে মিশেছে যে রাস্তায় সেই পথটিও ১০০ ফুট প্রশস্ত। উড়োজাহাজ অনায়াসে ওঠানামা করতে পারে সেখানেও। এমনকি ব্যস্ত রাস্তায় চলন্ত গাড়িকে পাশ কাটিয়ে এগিয়েও যেতে পারে বিনা বাধায়।
সরকারি কাগজপত্রে অবশ্য ক্যামেরন পার্ক শহর নয়। আদতে একটি ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি। এই ধরনের কমিউনিটি মূলত বিমান ঘাঁটিতেই গড়ে ওঠে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিমান ঘাঁটি অকেজো হয়ে পড়েছিল। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকের সংখ্যাও বাড়ছিল। সংখ্যাটি ১৯৩৯ সালে ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ১৯৪৬-এ চার লাখে পৌঁছে।
যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেই অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকদের অবসরে একটু স্বস্তি দিতেই ফ্লাই ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন অকেজো বিমান ঘাঁটিগুলোতেই অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। চেনা পরিচিত পরিবেশে থাকতে বিমানচালকদের ভালো লাগবে, এই ধারণা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে সেই ভাবনা থেকেই তৈরি করা হয় ক্যামেরন পার্ক। এক সময়ে এর নাম ছিল ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট। সেই নাম বদলে হয় ক্যামেরন পার্ক এয়ারপার্ক। এই শহরের প্রতিটি পরিবারেরই কোনও না কোনও সদস্য এক সময়ে বিমানচালক ছিলেন।
বিশ্বে এমন ফ্লাই-ইন-কমিউনিটি রয়েছে ৬৪০টি। তার মধ্যে ৬১০টিই যুক্তরাষ্ট্রে। তবে বৈশিষ্ট্যে ক্যামেরন পার্ক তার মধ্যে সবচেয়ে নিখুঁত বলে মনে করা হয়।
অন্য সব শহরে বাস-ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়ি যে ভাবে চলে, এ শহরে উড়োজাহাজও চলে সেই ভাবে। গাড়ির গ্যারাজের মতোই উড়োজাহাজ রাখার জায়গা বা হ্যাঙ্গার রয়েছে ঘরে ঘরে।
রাস্তার পাশের সাইনবোর্ডগুলি অনেকটাই নিচু। উড়োজাহাজের ডানা লেগে নষ্ট না হয়ে যায়, এজন্যই নেওয়া হয়েছে এই অতিরিক্ত সাবধানতা। এমনকি রাস্তার নামও দেওয়া হয়েছে‘বোয়িং রোড’।
ক্যামেরন পার্কে গাড়ির পাশাপাশি উড়োজাহাজেরও প্রদর্শনী হয়। বছরে এক দিন রানওয়ে বরাবর সার দিয়ে দাঁড়ায় বিভিন্ন মডেলের বিমান। রানওয়ে ধরে একসঙ্গে সেই সব বিমানের উড়ান নেওয়ার দৃশ্যও দেখার মতো।
হাতে গোনা ১২৪টি বাড়ি রয়েছে এই শহরে। তার মধ্যে ২০টি বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সেই সব বাড়ি স্বস্তায় বেচেও দিচ্ছেন মালিকরা। ফেব্রুয়ারি মাসেই এমন একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন প্রকাশ্যে আসে। ইন্টারনেটে দেওয়া সেই বিজ্ঞাপনে উড়োজাহাজের হ্যাঙ্গার-সহ সেই বাড়িটির দাম চাওয়া হয়েছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ডলার।
তবে ক্যামেরন পার্কের অধিকাংশ বাসিন্দা আরামেই আছেন। ছোট্ট ‘শহর’-এ সুবিধার কমতি নেই। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল, এমনকি শপিং মলও রয়েছে। আবার কোনো বিছু দরকার হলে বা বেড়াতে চাইলে উড়োজাহাজ নিয়ে ছুটতে পারেন অন্য কোনো শহরে।