টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে মাত্র ৯ বছরেই তালিপাম গাছে ‘মরণ ফুল’!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২১, ৯:০০:০২
টাঙ্গাইলের সার্কিট হাউসের তালিপাম গাছে ‘মরণ ফুল’ ফুটেছে। এই গাছটি ২০১২ সালের ১৮ জুন তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের বাসা থেকে এনে রোপণ করেছিলেন। রোপণ করার ৯ বছর পর এই তালিপাম গাছে ফুল ফুটেছে।
শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তালিপাম গাছ দেখতে অনেকটা তাল গাছের মতোই। ঝড়ে হেলে না পড়ার জন্য গাছের নিচে রড নিয়ে খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে আর তালিপাম গাছের ফুল থেকে মৌমাছি ও ভোমর ছোটাছুটি করছে। বারবার ফুলের পরশ বা ফুল থেকে মধু নেওয়ার চেষ্টা করছে মৌমাছি।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সার্কিট হাউসে তেমন কাউকে দেখা যায়নি। তবে পাশে কয়েকজন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গাড়ি চালক তাদের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। তারা অবশ্য গাছটির নাম জানেন না।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর কোথাও আর বুনো পরিবেশে Corypha taliera বা তালিপাম গাছ আর দেখা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা শেষ তালিপাম গাছটিও ফুল দিয়ে মরে গেছে ২০১০ সালে। সেই গাছের ফল থেকেই চারা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
১৮১৯ সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলে তালিপাম গাছের সন্ধান পেয়েছিলেন ব্রিটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী উইলিয়াম রক্সবার্গ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের পাশে ১৯৫০ সালে আরেকটি গাছ শনাক্ত করেন অধ্যাপক এম সালার খান।
সে সময় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে আরেকটি গাছ ছিল। সেই গাছে ১৯৭৯ সালে ফুল আসে। শতবর্ষী সেই গাছে হঠাৎ ফুল দেখে স্থানীয়রা চমকে যায়। ‘ভূতের আছর’ ভেবে ফল ধরার আগেই গাছটি কেটে ফেলেন তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছটিকে বুনো পরিবেশে বিশ্বের একমাত্র তালিপাম গাছ হিসেবে ঘোষণা করে। গাছটি লাগানো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে। ২০০৮ সালে এই গাছে ফোটে মরণ ফুল। জীবনচক্র মেনে ফুল থেকে ফল হয়। ২০১০ সালে মারা যায় গাছটি।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুহানা নাসরিন বলেন, গাছটি সাবেক জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরী স্যারের সময় লাগানো। আমি যত দূর জানি গাছটি ১০০ বছরে একবার ফুল দেয়। গাছটি রোপণের ৯ বছরে ফুল ধরেছে। গাছটি ফুল দিয়ে ফল দেবে এরপর মরে যাবে, তাই এই ফুলকে আমরা মরণ ফুল বলছি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, গাছে দুই দিন আগে ফুল ফুটেছে। ধারণা করা হচ্ছে হাউব্রিড হওয়ার কারণে এত তাড়াতাড়ি ফুল ফুটল। গাছটি এক বার ফুল দেওয়ার পর আবার মারাও যাবে।