স্রোতের মতো মানুষ আসছে নারায়ণগঞ্জে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২১, ৬:৪৭:০১
শিল্প-কারখানার মালিকদের সুপারিশে রবিবার থেকে খুলছে শিল্প কারখানা। সরকার এই সিদ্ধান্তের প্রজ্ঞাপন জারি করার পরপরই মালিক পক্ষের ফোন পেয়ে গণপরিবহন বন্ধ সত্ত্বেও চাকরি বাঁচানোর তাগিদে নারায়ণগঞ্জে ফেরা শুরু করেছেন শ্রমিকরা।
শনিবার দেখা যায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে স্রোতের মতো মানুষ ঢুকছে শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জে। চাকরি বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিকল্প উপায়ে নারায়ণগঞ্জে আসছে শ্রমিকেরা।
দুপুর ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে শত শত শ্রমিক পায়ে হেঁটে নারায়ণগঞ্জে আসছে। আবার কেউ মাইক্রোবাসে কেউবা ট্রাকে আবার কেউ মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আসছেন।
শেরপুর নালিতাবাড়ী থেকে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন আনোয়ার নামে এক পোশাক শ্রমিক। তিনি নারায়ণগঞ্জে আসার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো অটো কিংবা রিকশায় করে তিনি এসেছে। দুর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে চাকরি বাঁচাতে আমাদের সব দুর্ভোগ হজম করাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী একই কারখানায় কাজ করি। ভেবেছিলাম ৫ তারিখ কারখানা খুলবে। আমাদের কারখানা ছুটিও দিয়েছিল ৫ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু হঠাৎ করে কাল সিদ্ধান্ত হলো কারখানা খোলার। এরপর আমার লাইনের ইনচার্জ ফোন দিয়ে বলে কারখানা ১ তারিখ থেকে খোলা, যেভাবে পারো ঢাকায় চলে এসো। পরে আর কি করার- শেরপুর থেকে রাত ২টার দিকে অটোরিকশায় উঠেছি, এ পর্যন্ত আসতেই তিন বার সিএনজি পাল্টিয়েছি। এখন চন্দ্রা থেকে ভ্যানে করে আসলাম। আসতে প্রায় দুজনে মিলে ১৪০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়েছি।
ট্রাকে করে রংপুর থেকে এসেছেন আকলিমা, সুমা, হৃদয়, সানু মিয়াসহ অনেক শ্রমিক । তারা বলেন, কারখানা খুলে দিয়েছে। কাল থেকেই নাকি কারখানা চলবে। এখন কারখানায় গিয়ে ডিউটি করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। তাই সবাই মিলে যে ট্রাকে বাড়িতে গিয়েছিলাম সে ট্রাকেই আবার নারায়ণগঞ্জে আসলাম।
এদিকে শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ পথে মহাসড়কের সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, জালকুড়ি,কাচপুর, রূপগঞ্জের বরপা, ভুলতাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। সেখানে প্রত্যেক গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমার মূলত সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি। সরকার যেভাবে নির্দেশ দেয় আমরা তা পালন করি। যেহেতু রবিবার রপ্তানিমুখী কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে তার মানা হবে। পরিচয়পত্র যাচাই করে তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রিকশা ও পিকআপ ভ্যানে করে মানুষ মহাসড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জে ঢুকছে। দলে দলে হেঁটেও ঢুকছে মানুষ।
ফতুল্লা বিসিক এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন সগীর আহমেদ । তিনি বলেন, চাকরি বাঁচাতে শরীয়তপুর থেকে লকডাউনের মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। লকডাউন চলছে, তাই রাস্তায় বাস নেই। ছোট ছোট গাড়িতে ভেঙে ভেঙে এসেছি। ভোগান্তি ও ভাড়া দুটোই বেশি গেছে।