জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশের
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০২১, ২:১০:৪২
সিরিজ আগেই জিতে নিয়েছিল। এবার তিন ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবাল বাংলাদেশ।
প্রথম দুই ম্যাচ হেরে যাওয়ায় শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিল জিম্বাবুয়ে। মঙ্গলবার হারারেতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৯৯ রানের টার্গেটও দাঁড় করায় তারা। কিন্তু অধিনায়ক তামিম ইকবালের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে ১২ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ৩০২ রান করে টাইগাররা। এর আগে ৪৯.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রানের বড় পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন তামিম ও লিটন দাস। দুই ওপেনারের জুটি ভাঙে দলীয় ৮৮ রানে। তামিমের ফিফটি উদ্যাপনের পর ওয়েসলি মাধেভেরের বলে বিদায় নেন লিটন (৩২)। এরপর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তামিম। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩০ রানে লুক জংওয়ের বলে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
দুই সতীর্থকে হারালেও অধিয়ানকসুলভ দায়িত্ব কাঁধে ব্যাট চালিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ৩০তম ওভার করতে আসা তেন্দাই চাতারার প্রথম বলে চার মেরে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পা রাখেন তিনি। পরের বলেও চার হাঁকান এই ড্যাশিং ওপেনার।
জিম্বাবুয়েকে ম্যাচে ফেরাতে চেষ্টা করেন ডোনাল্ড তিরিপানো। পরপর দুই বলে তামিম ও মাহমুদউল্লাহকে উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাবার ক্যাচ বানান তিনি। তামিমের ৯৭ বলে ১১২ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮ চার ও ৩ ছয়ে।
টাইগার অধিনায়কের বিদায়ের পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০০তম ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। এই জায়গায় তিনি স্বান্তনা খুঁজতে পারেন ব্রায়ান লারার কাছ থেকে। ক্যারিবীয় কিংবদন্তিও নিজের ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নেমে শূন্য হাতে ফিরেছিলেন।
তামিম-মাহমুদউল্লাহ ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করা তিরিপানোকে আশাহত করেন নুরুল হাসান সোহান। জিম্বাবুয়েন পেসারের প্রথম বলে ৪ মারেন তিনি। মোহাম্মদ মিঠুন (৩০) সাজঘরে ফেরার পর আফিফ হোসেনকে (২৬) নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন সোহান। তার ৩৯ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬ চারে।
এর আগে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পায় জিম্বাবুয়ে। দুই ওপেনার রেগিস চাকাবা ও তাদিওয়ানাশে মারুমানি মিলে স্কোরবোর্ডে জমা করেন ৩৬ রান।
স্বাগতিকদের ওপেনিং জুটি ভাঙেন সাকিব। মারুমানিকে (৮) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্র্যাকথ্রু এনে দেন তিনি। এরপর চাকাবা-ব্রেন্ডন টেলর মিলে ৪২ রানের জুটি গড়েন। টেলরকে ইনিংস বড় করতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। ব্যক্তিগত ২৮ রানে তামিমের হাতে বন্দী হন জিম্বাবুয়েন অধিনায়ক।
নিজের দ্বিতীয় শিকার হিসেবে ডিয়ন মায়ার্সকে (৩৪) ফেরান মাহমুদউল্লাহ। চাকাবার সঙ্গে ৭০ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন তিনি। সতীর্থদের একের পর এক বিদায়ের মাঝে ফিফটি করেন চাকাবা। মায়ার্সের বিদায়ের পর মাধেভেরেকে (৩) আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি থেকে ১৬ রান দূরে থাকতে তাসকিন আহমেদের বলে বোল্ড হন চাকাবা। জিম্বাবুয়েন উইকেটরক্ষকের ৯১ বলে ব্যক্তিগত ৮৪ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭ চার ও ১ ছয়ে।
চাকাবা ফেরার পর দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগ দিয়ে স্বাগতিকদের বড় লিডের পথে নিয়ে যান সিকান্দার রাজা ও রায়ার্ন বার্ল। দুজনের ৮০ বলে ১১২ রানের জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ।
দলীয় ২৮৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে ফেরেন রাজা। তার আগে করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি। রাজার ৫৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭ চার ও ১ ছয়ে। এরপর স্কোরবোর্ডে ১০ রান যোগ হতেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন ফেরান বার্লকে। ৪৩ বলে ৪ চার ও ৪ ছয়ে ৫৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি।
পরের দুই উইকেটও সাইফউদ্দীনের। তিরিপানো (০) ও চাতারাকে (১) বোল্ড করেন তিনি। নিজের তৃতীয় শিকার হিসেবে শেষ উইকেট ব্লেসিং মুজারাবানিকে (০) বোল্ড করে জিম্বাবুয়েকে দলীয় তিনশ’ রানের ঘরে পা রাখতে দেননি মুস্তাফিজ। লুক জংওয়ে অপরাজিত ছিলেন ৪ রানে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর ধরে দুই দলের ওয়ানডে সিরিজ মানে যেন একপক্ষীয় লড়াই। হারারেতেও তার চিত্র আরেকবার স্পষ্ট হল। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে শেষ ওয়ানডে জিতেছে ২০১৩ সালে, বুলাওয়েতে।
দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম। আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখায় সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব।