প্রতিদিন প্রশাসন, পুলিশ সবাইকে হেন্ড মাইক দিয়ে বাজারের অলিগলিতে করোনা সচেতনতায় মাইকিং করলেও কেউ কানেই তুলছে না বিষয়টি। ব্যবসায়ী কিংবা সাধারণ মানুষ কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। আর ঈদ বাজারে পুরুষদের থেকে এগিয়ে রয়েছে নারীরা।
গত ১০ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয়ার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসমাগম না করে কেনাকাটা করার নির্দেশনা থাকলেও এর কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার কথা থাকলেও কেনাকাটা চলছে রাত অবধি! এছাড়া উন্মুক্ত রয়েছে সব ধরনের দোকানপাট। নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসনিক তৎপরতা থাক্লেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সবমিলিয়ে দিনকে দিন বাড়ছে জনসাধারণের মাঝে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবার ঝুঁকি।
জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৭৮ জন সন্দেহভাজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে উপজেলায় মোট ৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো গেলে শনাক্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। কারণ জগন্নাথপুর করোনা শনাক্তের যথেষ্ট কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসা বহিরাগত জনস্রোত।
এতো কিছু আশঙ্কার মধ্যেই উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ঈদের আমেজ নিয়ে করোনা ভীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে কেনাবেচা। এ যেন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নির্দেশনায় ১০টি শর্তে দোকানপাট খোলা রাখার কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ৫ জনের বেশি এক সাথে ভিড় করা যাবে না, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই মাস্ক ব্যবহার করবেন, দোকানের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হবে। কিন্তু অধিকাংশ দোকানপাটগুলোতে এসব শর্তের কোনোটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই এসব খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। ইজিবাইক, মোটর সাইকেল, রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। লোকজন গাদাগাদি করে বসে এসব যানবাহন ব্যবহার করে বাজারে আসছেন।
সরেজমিনে উপজেলার প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র জগন্নাথপুর পৌরসভা বাজারের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আমেজে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে এসে কেনাকাটা করার জন্য সকাল থেকেই দল বেঁধে ভিড় করছেন লোকজন। নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা, আবার অনেক অভিভাবকদের সাথে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও এসেছে ঈদের কেনাকাটা করার জন্য।
এতো জটলার মাঝে ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা এক নারী জানান- ‘সামনে ঈদ। নতুন পোশাক কিনতে ছেলেমেয়েরা বায়না ধরল। তাদেরকে কোনোভাবেই বোঝানো গেলো না। শেষমেশ উপায়ন্তর না পেয়ে কেনাকাটা করতে বের হলাম অনেকটা বাধ্য হয়ে। আর ভয় তো কিছুটা আছেই। কিন্তু উপায় নেই বের না হয়।’
মুখে মাস্ক নেই, শারীরিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। দেদারসে কেনাকাটা করে যাচ্ছেন। কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। জটলা বেঁধে লোকজন ভিড় করছেন দোকানে সীমাহীন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জানান, ‘দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকার পর কেনাবেচা করছি। পাওনাদার, দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, সংসার খরচ সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতি মাথায় কাজ করছে না। কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে পারব সে চিন্তাই সারাক্ষণ মাথায় ঘোরপ্যাঁচ খাচ্ছে। আগে তো পেট বাঁচাই, তারপর করোনা!’
এদিকে শুরুতে লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসনিক যে মনিটরিং ছিল তেমনটি আর দেখা মিলছে না। যে কারণে লোকজন হুমড়ি খেয়ে বাজারগুলোতে ভিড় করার সাহস পাচ্ছেন। যদি আগের ন্যায় পুলিশি টহল ও নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসনিক নজরদারি করা হয়, তাহলে এ জনস্রোত ঠেকানো যাবে। এমনই অভিমত স্থানীয়দের সচেতন মহলের।