হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ। অথচ সরকারি নির্দেশনায় মোতাবেক ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।
এছাড়া নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে যে যার মতো করেও বাঁধ নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন। এতে কৃষকরা শঙ্কিত হলেও নির্বিকার সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকী কাজগুলো আগামী তিন-চার তিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু দায়সারা ভাবে বাঁধ নির্মাণ আর বৃষ্টির মৌসুম আসন্ন হওয়ায় কৃষকরা তাদের কথায় ভরসা পাচ্ছেন না।
স্থানীয় বলছেন, হাওরের জমিতে বছরে একবার ফসল লাগানো যায়। সেজন্য সবাই ধারদেনা করে টাকা-পয়সা নিয়ে হাওরে ফসল ফলায়। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের গাফলতির কারণে প্রতিবছর ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এবারও বেশির ভাগ প্রকল্পে দায়সারা ভাবে কাজ শেষ করা হচ্ছে। কিছু কিছু প্রকল্পে তো বাঁধের পাশ থেকে মাটি তোলা হচ্ছে। আবার কিছু প্রকল্পে শুধু মাটির প্রলেপ দিয়েই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে করে কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের ১৬ নং প্রকল্পের বেতাউকা গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকায় নলুয়া হাওরের সুইচ গেইটের আশে পাশে এখনো মাটি ফেলা হয় নাই। আর ১৭ নং পিআইসির কাজও এখনো সম্পূর্ণ হয় নি। অন্যদিকে ১৮ নং পিআইসির কাজে অল্প কিছু শ্রমিক কাজ করতে দেখা গেছে। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেও এই ৩টি প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
এসব এলাকার স্থানীয়রা জানান, বর্তমান মেম্বার জুয়েল মিয়ার নিজস্ব লোক দিয়ে ৪টি পিআইসির কমিটির করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় কৃষকেরা চিন্তায় রয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয় তিনি ১৮নং প্রকল্পের সাইন বোর্ড বাড়ির ভিতরের ঘরের বারান্দায় রেখে দিয়েছেন। আর ১৭নং প্রকল্পের সাইন বোর্ড খোঁজাখুঁজি করে শ্রমিকদের অস্থায়ী ঘরের পিছনে পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়া বলেন, আমার আত্মীয়-স্বজনের নামে কোন পিআইসির নাই। বেতাউকাসহ আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের লোকদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আমাকে পিআইসি কমিটির কাজ দেখা জন্য বলা হয়েছে। সুইচ গেইটে পিআইসির কাজ বৃষ্টি ও মাটি সমস্যা জন্য কাজ শেষ হয় নাই। দুই অথবা তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ১৬ নং পিআইসির কাজ তিন দিন সময় লাগবে।
এদিকে মইয়ার হাওরের রানীগঞ্জ ইউনিয়নের আওতাধীন নলুয়া হাওর পোল্ডার-২ এর আওতাভুক্ত ৩৩ নম্বর প্রকল্পের নারিকেলতলা এলাকার কাছুরখাই নামকস্থানে পুরনো মাটি ওপর দায়রাসাভাবে সামান্য মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। প্রকল্পের কোন সাইনর্বোডও নেই। তবে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত লোকজন জানিয়েছেন প্রকল্পটি স্থানীয় রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবুল কালামের। তাঁরা আবুল কালামের শ্রমিক।
অপরদিকে পাশের ৩২ নম্বর প্রকল্পের সভাপতিও ইউপি সদস্য আবুল কালাম। এ প্রকল্পের ভাল কাজ না হওয়ায় একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টি এলেই বালি মাটি ধসে পড়বে। এছাড়াও ৩৪ নম্বর প্রকল্পেও দায়সারাভাবে কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
৩২ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, বাঁধের যেসব স্থানে ত্রুটি রয়েছে সে স্থানে কাজ করা হচ্ছে। ৩৩ প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি অন্য আরেকজনের ছিল। প্রকল্পের কাজ শুরু না করায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনায় আমি কাজ শুরু করেছি। নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী জানান, এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধ প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি ওই সব প্রকল্পের কাজের দায়িত্বরত লোকজনকে নির্দেশনা দেয় হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, রোববার (৮ মার্চ) উপজেলা কাবিকা কমিটির মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে আগামী ১৫ তারিখে পর্যন্ত দিক নিদর্শনা দেওয়া হয়েছে কাজ করার জন্য। আর সুইচ গেইটে কাজ আরো তিন সময় লাগতে পারে। তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।