ভারতের ভেতরে ঢুকে ‘আত্মহত্যা’ করেন সিলেটের জাকারিয়া, দাবি বিজিবি’র
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৫, ৯:০৮:৫০

শুক্রবার জাকারিয়ার মরদেহ হস্তান্তর করে ভারত
কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমা সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা জাকারিয়া আহমদের মরদেহ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত। শুক্রবার দুপুরে ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। এসময় বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভারতের পিনারসালা থানা-পুলিশ জাকারিয়া আহমদের (২৩) এর মরদেহ উদ্ধার করে। ভারতে জাকারিয়ার মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করা হয়।
এদিবে, জাকারিয়ার মৃত্যুর ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় পুলিশের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিজিবির সিলেট ব্যাটালিয়ন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
মৃত মো. জাকারিয়া আহমদ (২৫) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছড়ারবাজারের লামাগ্রামের মো. আলাউদ্দিনের ছেলে। গত সোমবার তিনি বিয়ে করেন।
বিজিজির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশি নাগরিক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) উৎমা বিওপিতে মো. গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি এসে জানায়, তার ভাতিজা মো. জাকারিয়া আহমদ সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় লোকজন সীমান্ত পিলার ১২৫৮/২০-এস থেকে আনুমানিক ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে একটি গাছে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
এতে আরও বলা, এই সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি মৃত ব্যক্তির চাচা মো. গিয়াস উদ্দিনকে পুলিশি সহায়তার জন্য দ্রুত থানায় জিডি করতে পরামর্শ দেয়। পরে সিলেট ব্যাটালিয়নকে (৪৮ বিজিবি) বিষয়টি জানানো হয়। বিএসএফ মরদেহের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ভারতের পিনারসালা থানায় সংবাদ দেয়।

জাকারিয়া আহমদ
উল্লেখ্য, ঘটনাস্থল থেকে ভারতের পিনারসালা থানা দূরে ও ঘটনাস্থল দুর্গম এলাকায় হওয়ায় এবং ওই এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করে বলে জানিয়েছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভারতীয় পুলিশ বিএসএফের সহায়তায় মরদেহটি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নিয়ে যায়। ৪৮ বিজিবি অধিনায়ক ও বিএসএফ কমান্ড্যান্টের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশি পুলিশের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে বিজিবি জানিয়েছে, জাকারিয়ার পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে।
বিজিবির ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক বলেন, লাশ অভ্যন্তরে হওয়ায় বাংলাদেশের পুলিশ ও বিজিবি সেখানে যেতে পারেনি। রাতে ভারতের পিনারসালা থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। আর শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
নিহত জাকারিয়া বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকের কাজ করতেন। গত সোমবার একই ইউনিয়নের কাকরাইল গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে জাকারিয়ার বিয়ে হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে জাকারিয়া বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫৭ নম্বর মেইন পিলারের ২০ নম্বর ছাফ পিলারের নিকটবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে একটি গাছের ডালে দড়িতে ঝুলন্ত একটি মরদেহ দেখা গেছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তির পরিবার মরদেহটি জাকারিয়ার বলে শনাক্ত করে।
জাকারিয়া আহমদের বাবা আলাউদ্দিন জানান, কারও সঙ্গে জাকারিয়ার সমস্যা ছিল না। বুধবার রাতে তারা সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে তার ছেলে ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় আছেন বলে খবর পান আলাউদ্দিন।