বিশেষ সুবিধা পাট শিল্পের ঋণে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৮:১৭:৩৫
পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পাটপণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে পাট শিল্পের বকেয়া ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ খাতের বকেয়া (অনিয়মিত) ব্যাংক ঋণ ব্লক হিসেবে স্থানান্তর করে ১০ বছরের পরিশোধ সুবিধা দিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম দেড় শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। পাশাপাশি এক বছরের জায়গায় গ্রেস পিরিয়ড দুই বছর করা হয়েছে। এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে গত ৪ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আদেশ জারি করে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাট খাতের গত বছরের জুন পর্যন্ত ঋণ দায়ের সুদ ও আসল পৃথক ব্লক হিসেবে স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে। এসব ঋণ পরিশোধে ১০ বছর সুবিধা পাবে। তবে ঋণ পরিশোধ পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে গ্রেড পিরিয়ড এক থেকে দুই বছরে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ ব্লক সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ দশমিক ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ১ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
সুপারিশগুলোতে পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প ব্যবহারের সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে চলার জন্য ক্রেতা, বিক্রেতা, জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ১ অক্টোবর থেকে কেউ বাজার করতে পলিথিন শপিং ব্যাগ আনতে পারবে না বা বাজার থেকেও নিতে পারবে না। পরবর্তী সময়ে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকও বন্ধ করা হবে। এ জন্য জনগণ, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সুপারিশগুলো খুশি মনে পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে এবং নিজেরাই বিকল্পের পরামর্শ দিচ্ছে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নভেম্বর থেকে পলিথিন উৎপাদনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
পাটপণ্যের রফতানি বাড়াতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ এদিকে পাটপণ্যের রফতানি বাড়াতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কেননা পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসা করে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন দেশের অনেক নারী। এই খাতের নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের বিপণন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ৩১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে পাটজাত পণ্য বহুমুখীকরণে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ’। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মহিলাবিষয়ক অধিদফতর। প্রস্তাবিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের প্রায় ১৩৫টি দেশে ২৮২টি পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়। বিগত ১২ বছরে বার্ষিক পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে চারবার।
বিগত বছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ। পাটের ব্যাগ, থলে ইত্যাদির রফতানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ, অন্যান্য পণ্য ৫ শতাংশ এবং হাতে বাছাই করা পাটের আঁশ ও স্ট্যাপল ফাইবার রফতানি বেড়েছে ১০ শতাংশ।
প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা ও কার্যক্রমের বিষয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য অধিক হারে সময়োপযোগী আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
পাট অধ্যুষিত ও উৎপাদনকারী অন্যতম তিনটি জেলা গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, খুলনা ও ঝিনাইদহ জেলার এক হাজার ৫৭৫ জন নারীকে আন্তর্জাতিক মানের পাটজাত পণ্য উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্প মেয়াদে প্রতি জেলায় ৩৭৫ জন নারী উদ্যোক্তা পাটজাত পণ্যবিষয়ক বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ পাবেন।
বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য ব্যবহারে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পটি জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ডাটাবেইস (ডিজিটাল পোর্টাল/অনলাইন মার্কেটিং) খাতে কী কী অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেটিও জানতে চাওয়া হবে।
কমিশন বলছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১০ জনের বেতন বাবদ ৭২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, আবার ১৩ জনের আউটসোর্সিং ব্যয় বাবদ ২৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।