যুদ্ধ বিমানের পাইলট হতে দেশ ছেড়েছিলেন সিকান্দার রাজা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২২, ৯:৪০:১৬
তার জন্ম ও বেড়ে উঠা পাকিস্তানে। তবে তিনি খেলেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। রোডেশিয়ানদের জাতীয় দলে দারুণ সময় কাটছে অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজার। প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে দারুণ খেলেছেন। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও রাজার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ক্রিকেটার হতে নয়, বরং যুদ্ধ বিমানের পাইলট হতে নিজ দেশ ছেড়েছিলেন।
শুক্রবার ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে সিকান্দার রাজা এই কথা বলেন। সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে থাকাকালীন আমি কখনোই ভাবিনি যে একদিন ক্রিকেটার হবো। আমি আগেও বলেছি ক্রিকেটার হওয়ার জন্য পাকিস্তান ছাড়িনি, বরং আমার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ বিমানের পাইলট হওয়া যেটা পারিনি।’
জিম্বাবুয়ের যাওয়ার পরও ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি পরিকল্পনা ছিল না রাজার। মাস্টার্স করার পরিকল্পনার সময়েই জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান। তারপর থেকেই মূলত ক্রিকেটে তারা যাত্রা শুরু হয় বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনায়রিং পড়ছিলাম তখন আমার পরিবার জিম্বাবুয়েতে চলে যায়। আমি সেখানে মাস্টার্স্ট করার পরিকল্পনা করছিলাম, ঠিক তখনই জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পাই এবং এরপর থেকেই যাত্রা শুরু হয়।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুর্দান্ত খেলেছেন রাজা। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে টানা হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ২০ ওভারের খেলার ফর্ম দেখা গেল ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের দেওয়া ৩০৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিম্বাবুয়েকে জিতিয়েছেন তিনি।
গত ৯ বছরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা ১৯ ম্যাচ হেরেছে জিম্বাবুয়ে। সবশেষ জয় ছিল ২০১৩ সালে। শুক্রবার রাজা ও ইনোসেন্ট কাইয়ার সেঞ্চুরিতে থামে টাইগারদের জয়রথ। রাজা যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তখন চাপে ছিল জিম্বাবুয়ে। রাজা নিজেও চাপে ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো খেলার ও খেলা জেতার চাপ অবশ্যই আছে।’
সিকান্দার রাজা পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) ফাইটার পাইলট হওয়ার প্রস্তুতির জন্য তার জীবনের অনেকগুলি বছর কাটিয়েছেন। চোখের সমস্যার কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত পাইলট হতে পারেননি। কিন্তু শৈশবের পুরো সময়টা তিনি কাটিয়েছেন যুদ্ধ বিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থেকে। পাকিন্তান এয়ারফোর্স পাবলিক কলেজে প্রশিক্ষণের সময় তিনি অনেক পরিশ্রম করেছেন।
এসব ক্রিকেটের জীবনে প্রভাব ফেলেছে কি না জানতে চাইলে রাজা বলেন, আমি মিথ্যে বলব না। অবশ্যই ফেলে। এসব পরিশ্রম আমায় সাহায্য করে ব্যর্থতার পরেও ঘুরে দাঁড়াতে। আমি এয়ার ফোর্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। আর তাই আমরা হাল ছেড়ে দিই না। আমি আঘাত পাই প্রতিনিয়ত, হাত-পায়ের আঙ্গুলে চোট পাই। কিন্তু পরোয়া করি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এয়ারফোর্স কলেজের সাড়ে তিন বছর সময় আমাকে শক্ত মনোবলের মানুষ হিসেবে তৈরি হতে সাহায্য করেছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট থাকতেও সাহায্য করছে।
এখন পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের জার্সিতে ১১৫ ওয়ানডে খেলেছেন রাজা। যেখানে চার সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ৩৩৬৬ রান। একদিনের ক্রিকেটে ৬৪টি উইকেটও রয়েছে তার। এছাড়া জিম্বাবুয়ের হয়ে ৫৮টি ম্যাচে খেলে ১০৪০ রান করেছেন রাজা। যেখানে তার উইকেট সংখ্যা ২৮। সাদা পোষাকে ১৭টি টেস্টে জিম্বাবুয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন রাজা। যেখানে ১১৮৭ রানের সঙ্গে রাজার সংগ্রহে রয়েছে ৩৪টি উইকেট।