রাজনগরে সপ্তাহব্যাপী বন্যায় কুশিয়ারার ২৮ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০২২, ৭:৩৮:২৩
রাজনগর (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের রাজনগরে সপ্তাহব্যাপী বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১৬ জুন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এছাড়াও উপজেলার প্রধান নদী মনুর পানি কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় কয়েকটি গ্রাম অশঙ্কা মুক্ত হলেও কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে কুশিয়ারার আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সহস্রাধিক পরিবার।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৬ জুন রাজনগরের উত্তরাঞ্চলের উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের বাইরের গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৩০ হাজার মানুষ। টানা সাত দিনের বন্যায় এসব এলাকার মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কটসহ দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। দুর্গত এলাকায় রয়েছে গো-খাদ্য সঙ্কট।
রামপুর গ্রামের লাল মিয়া (৫৫) ও সুনামপুর গ্রামের আলী হোসেন (৫২) জানান, তাদের মতো অনেক কৃষক নিজেদের গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গো-খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ায় গবাধিপশু আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে কম মূল্যে গবাধি পশু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে, অব্যাহত বন্যায় মানুষের বাড়িঘর ছাড়াও প্লাবিত হয়েছে নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৫টি মসজিদ, পাঁচটি মন্দির, একাধিক কবরস্থান। দুর্গত ৪০০ পরিবারের প্রায় দু’হাজার মানুষকে আটটি আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা, ওষুধ, স্যালাইনসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও সামাজিক সংগঠন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ হতে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, আটটি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৪০০ পরিবারের মধ্যে ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৩০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার উত্তরভাগ গ্রামের প্রয়াত রাকেশ দাসের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় যুবলীগের সহায়তায় আমনপুর, ছিক্কা, যোগীকোনা, সুরিখাল, নয়াটিলা গ্রামের এক হাজার ৮০০ মানুষকে রান্নাকরা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বাবলু সূত্রধর জানান, এ পর্যন্ত ৪০০ পরিবারের মধ্যে ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৩০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং এ ব্যপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।