পরীমনির রিমান্ড: দুই বিচারককে আবারও ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:২৫:৪৬
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনির বারবার রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে দুই বিচারক ও তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে তাদের আবারও আদালতে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ বিষয়ে ওই দিন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রেখেছেন আদালত।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের কাজলের ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। সঙ্গে ছিলেন সৈয়দা নাসরিন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।
আইনজীবীরা জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বনানী থানায় করা মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়ে দুই বিচারককে আবারও ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুই বিচারক যে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তাতে সন্তুষ্ট নন বলে ওই দিনই জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আজ নির্ধারিত দিনে আবারও বিষয়টি নিয়ে শুনানি শুরু হলে নিম্ন আদালতের বিচারকের পক্ষের আইনজীবী আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড কী কারণে ওনারা (রিমান্ড) দিয়েছেন তা বলেছেন।
সেসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড ওনারা ইয়াং অফিসার। ঠিকমতো হয়তো ব্যাখ্যাটা দিতে পারেননি। আর ওনারা ক্ষমাও চেয়েছেন।’
তখন আদালত বলেন, ‘আচ্ছা তাহলে আবার তারা ব্যাখ্যা দিক। আমরা পরবর্তী শুনানির জন্য ২৪ অক্টোবর দিন রাখছি।’
রিমান্ড মঞ্জুরের কারণ উল্লেখ করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামের দেওয়া ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি হাইকোর্ট। আদালত বলেছিলেন, ‘ত্রুটি হয়েছে যে তা ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বাস করেন না। হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে বিচারকদের লিখিত ব্যাখ্যা আগের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়। পরের দিন হাইকোর্টে তাদের লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত আজ পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন।
গত ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পরীমনিকে প্রথমে চারদিন, দ্বিতীয় দফায় দুদিন, তৃতীয় দফায় একদিনসহ মোট সাতদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিফল হয়ে জজ আদালতে জামিন চান পরীমনি। তবে জজ আদালত জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ দেরিতে নির্ধারণ করায় হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। হাইকোর্ট রুলও জারি করেন। পরে জজ আদালত পরীমনির জামিন আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ এগিয়ে আনেন। ৩১ আগস্ট তাকে জামিন দেওয়া হয়। পরদিন পরীমনি কারামুক্ত হন।
অন্যদিকে, হাইকোর্টে পরীমনির আবেদনের শুনানিতে তাকে দফায় দফায় রিমান্ড নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই দুই বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফাকে নিজের অবস্থান ও কারণ ব্যাখ্যা করতে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় দুই বিচারকের ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাও আদালতে উপস্থিত হন।
মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস দ্বিতীয় দফায় পরীমনির দুদিন ও ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম তৃতীয় দফায় একদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
রিমান্ড মঞ্জুরের কারণ তুলে ধরার পাশাপাশি পৃথক লিখিত ব্যাখ্যায় দুই ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তা অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে বলে উল্লেখ করেছেন। আর অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে করা ভুলত্রুটি মার্জনা করে পৃথক ব্যাখ্যা গ্রহণ করে অধিক ব্যাখ্যার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজিও জানান দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।