করোনাভাইরাস : চলমান বাস্তবতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২:৫২:০১
বিশ্ব অনেকবার অনেক কিছুতে শঙ্কিত হয়েছে। সভ্যতা ও শান্তি সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। কখনও যুদ্ধ, কখনও মহামারি, কখনও বা ঝড়-জলোচ্ছাস, বিশ্বমন্দা। কিন্তু সভ্যতার এই চরম অগ্রগতি, বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর উদ্ভাবনের এই সময়ে বিশ্বময় করোনাভাইরাস নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা যেন বিজ্ঞান, অগ্রগতি, উদ্ভাবন- সব কিছুকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
প্লেগ, উলাওঠা, ম্যালেরিয়া, কলেরা, বসন্ত, ডেঙ্গু আরও কত রকম রোগ-শোকে বিশ্বের একেক অঞ্চল একেক সময় উজাড় হয়েছে, ভীত হয়েছে জনপদ। কমিউনিজমের ভয়ে ইউরোপ-আমেরিকার পুঁজিবাদী ব্যস্থতা ও এক সময় প্রমাদ গুনেছে। কিন্তু সভ্যতার চরম বিকাশের এই একুশশতকে বিশ্বময় মানবসভ্যতার জন্য যে উদ্বেগ, উৎকণ্টা এবং গভীর সংকট তৈরি করেছে করোনা ভাইরাস বা কোভিট নাইনটিন, তা যেন নজিরবিহীন। অতীতের মনুষ্যসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দুযোগ-দুর্বিপাকের সঙ্গেই যেন তার কোন তুলনা নেই। বিশ্বময় কাঁপিয়ে দিচ্ছে প্রাণিবিধ্বংসী এই করোনা ভাইরাস। তবে, সেই প্রগৌতিহাসিক যুগ থেকে মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। জয়ীও হয়েছে। চুড়ান্ত ভাবে জয়ী হয়েছে বলা যায় না। প্রকৃতিও সুযোগ পেলে মানুষের ওপর আঘাত হানে। মানুষ তার সামনে অসহায়। পৃথিবীর আবহায়াও পরিবেশ দুষিত হচ্ছে দ্রুত।
নিত্যনতুন রোগ-জীবাণু জন্ম নিচ্ছে। উন্নত-অনুন্নত নির্বিশেষে দেশগুলোয় একেকটা ভয়ংকর রোগের মহামারী দেখা দিচ্ছে। এখন বিশ্ব আতঙ্কিত চীন থেকে আগত করোনা ভাইরাসের শুরু চীনের উহান প্রদেশ থেকে। উহান প্রদেশ প্রায় উজাড়। গত ডিসেম্বর-২০১৯ থেকে শুরু করে একক দশক-শতক-হাজার করতে করতে দুনিয়াজুড়ে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটিরও অনেক বেশি। মৃতের সংখ্যাও এক-দুই করতে করতে এখন ৯ লক্ষ ছুঁইছুঁই। এক চীন থেকে এখন সব মহাদেশ, এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার শতাধিক দেশ আক্রান্তের তালিকায়। কে জানে, এ লেখা যেদিন প্রকাশিত হবে, সেদিন আর কোনো দেশ বাকি থাকবে কি না এবং আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় কে জানে? ধনী-দরিদ্র বিত্তশালী পরাশক্তি, সা¤্রাজ্যবাদী, সমাজতান্ত্রিক, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদীÑ কেউই বাদ নেই করোনা ভাইরাস থেকে।
বিশ্বব্যাপী যত ভয়, আলোচনা দুঃশ্চিন্তা আজ করোনা ভাইরাস নিয়ে। থমকে দাঁড়িয়েছে জীবনযাত্রা। স্থবির হয়ে বসেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানা, চাষাবাদ, মাদরাসা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। সামাজিক-পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন হতে চলেছে। একজন আরেকজনকে সন্দেহের চোখে দেখছে প্রাণঘাতী এই ভাইরান ছড়িয়ে দিচ্ছে কিনা। একজন আক্রান্ত হলে প্রিয়জনও তাকে এড়িয়ে চলছে। তারপর অর্থনীতি, শেয়ার বাজারে ধস্। খুচরা বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে টানাটানি। ওষুধপত্রেও অনেক সংকট, আমদানিতে, সরবরাহে সংকট। জিনিসপত্রের দাম উর্ধ্বমুখী। পর্যটন শিল্পে, হোটেল ব্যবসায় মন্দা। বিত্তশালী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, কী জানি কী হয়?
প্রতিদিন নিত্যনতুন আক্রান্তের খবর। নিয়ন্ত্রণের কোন সুখবর নেই। সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সকল সস্পর্ক। প্রতিটি দেশের নাগরিক উদ্বিগ্ন! সরকার, পার্লামেন্ট, ইউনিসেফ, জাতিসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মধ্যে উদ্বেগ। সবাই দিচ্ছে সতর্কবার্তা। তহবিল দেয়া হচ্ছে মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলারের। প্রতিকার প্রতিষেধকের খুব একটা সুখবর নেই। মানুষ মানুষের কাছেও অসহায়। প্রকৃতির কাছেও অসহায়। মানুষও, মানুষ মারার জন্য, সভ্যতা ধ্বংস করার জন্য ভয়ংকর ভয়ংকর সব অস্ত্র ব্যবহার করছে। এটা কি মানুষের বুদ্ধিভ্রম আর কৃতকর্মের জন্য প্রকৃতির প্রতিশোধ? মনে হয় সেটাই সম্ভব। সেই আদিকাল থেকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গাছকাটা চলছে অবাধে। আমাদের দেশের খাল-বিল নদী বুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা মাটির পাহাড় কেটে ফেলছে।
মানুষের তৈরি পলিথিন, নানা বর্জ্যদ্রব্য পরিবেশ দুষিত করে ফেলছে। তার ওপর বিজ্ঞানীদের সাবধানবাণী উপেক্ষা করে বছরের পর বছর সমুদ্রের জলে পরীক্ষামূলক ভাবে আনবিক বোমার বিষ্ফোরণ এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে বিষাক্ত রাসায়নিকের সংক্রমণে ক্যান্সার, নিউকোমিয়া ইত্যাদি ঘাতক রোগের ক্রমশ ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। সারা বিশ্বের পরিবেশ ও আবহাওয় এমনভাবে দুষিত হচ্ছে যে, এখনই তার প্রতিকার ব্যবস্থা না হলে সারা বিশ্বে এর প্রভাব ও বিপর্যয় দেখা দেবে। কিন্তু মানবসভ্যতার এই বিপদাশঙ্কা সম্পর্কে উন্নত ও ধনী দেশগুলো একেবারেই নির্বিকার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প তো প্রকৃতির ও আবহওয়ার বিষয়টি ক্রমাগত উপেক্ষা করে চলেছে। আবহাওয়া ও প্রকৃতি দুষণমুক্ত করার আন্তর্জাতিক ফোরামে ছোট ও ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর পক্ষ নিয়ে সংগ্রাম করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের দেশে সুন্দরবন ও এই বনের প্রাণি রক্ষায় আন্দোলন চলছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্কবাণী উচ্চরণ করেছেন, মানুষ যদি এখনও সতর্ক হয়ে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা হ্রাসের এবং সমুদ্রের গভীরতা কমানোর কোন প্রতিকার না করতে পারে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি অংশ ভয়াবহ প্লাবনে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তবে এই প্লাবনের এবং আনবিক বোমার চাইতেও যে ভয়ানক শত্রæ, বিশ্বের উন্নত-উন্নয়নশীল নির্বিশেষে সকল দেশের দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে, তার নাম করোনা ভাইরাস। আনবিক বোমার ও প্লাবনের চাইতেও এই করোনা ভাইরাসকে ভয়ংকর বললাম এ জন্য যে, এই ভাইরাসের কোন প্রতিশেধক এখনও আবিস্কার হয়নি। তবে অষুধ বিজ্ঞানীরা জরুরী চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সেই করোনা ভাইরাস মানবজাতির সামনে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে হাজির হয়েছে। বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবার পাশাপাশি এই ভাইরাস প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরও বহুমাত্রিক ‘শিক্ষা’ দিয়ে যাচ্ছে। সে আলোচনায় সরাসরি যাবার আগে করোনার প্রেক্ষাপটটা একটু বুঝে নেয়া দরকার। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে। তারপর থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, সেখানকার আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ থেকে ভাইরাসটি অন্যান্য এলাকায় ও চীনের বাইরে বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। করোনা ভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটির আরেকটি নাম ২০১৯ এনসিওভি বা নভেল করোনা ভাইরাস। এটি এক ধরণের করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের অনেক রকমের প্রজাতি আছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। যদিও নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে ৭টি। তবে করোনা এখন বড় এক আতঙ্কের নাম। তবে করোনা ভাইরাসের অর্থনৈতিক ক্ষতি জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়ে বেশি।
বিশেষ করে এই মহামারির কারণে শেয়ার বাজারে ব্যাপক ঝড় উঠে রাশিয়া এবং সৌদি আরবের মধ্যে তেলযুদ্ধ এবং সিরিয়ায় একটি সত্যিকারের যুদ্ধ সম্ভাব্য অভিভাসন সংকটকে ঘণীভূত করেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে যে গাঁথুনি ছিল তা করোনা ভাইরাসের কারণে খুলে গেছে। তাই স্টার্ট আপস এবং খনির মতো ব্যবসাগুলোয় ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। ভাইরাসটির সঙ্গে লড়াই করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ বা এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মহামারীর আতঙ্ক থেকে আমাদের অর্থনীতিগুলোকে প্রতিষেধক দেয়া। মানুষের দুর্ভোগ অসুস্থতা এবং মৃত্যুর আকারে আসতে পারে। তবে বিল পরিশোধ করতে না পেরে বা বাড়ি হারানোর মধ্যদিয়েও একই ধরণের অভিজ্ঞতা হতে পারে। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের বিস্তারের সময়ের সঙ্গে অনেকটা মিল রেখে শুরু হয়েছে রাশিয়া-সৌদি তেলযুদ্ধ। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তেলের দাম ৩০ শতাংশ কমে গেলে তার জের টানতে হবে মস্কো ও রিয়াদ উভয়কেই। কিন্তু এসময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়েও খুব একটা লাভবান হতে পারবে না। বরং তেলের দাম এতটা কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া, চাকরি চলে যাওয়া এমনকি রাজ্য পর্যায়ে আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে জরুরী অবস্থা জারি করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে ভাইরাস মোকাবেলায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের ‘ফেম’ তহবিল ছাড়াও সংকট মোকাবেলায় ফেডারেল সরকারের সাথে বিভিন্ন স্ট্রেট গর্ভনমেন্ট সমুহের যোগাযোগ ও সমন্বয় আরো সহজ এবং জোরদার হয়েছিল। তবে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ও এর কারণে লাখো মানুষের মৃত্যু এরই মধ্যে এই ছোঁয়াছে রোগ বাঁচিয়ে চলার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করেছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনসাধারণের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। রাষ্ট্রগুলো নিজেই অবরোধ জারি করেছে। সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে নানা সুরক্ষা ব্যবস্থা। আর এই সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণেই মানুষ এখন বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের এই গৃহবন্দী সময়ে নিউইয়র্ক শহরে গুরুতর অপরাধের মাত্রা কমে এসেছে।
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি) থেকে ৪ মে’২০ প্রকাশতি এক তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিল মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গুরুতর অপরাধের অভিযোগ যেখানে ৭ হাজার ১৬২ টি অপরাধের অভিযোগ করা হয়, সেখানে এবছর এপ্রিল মাসে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১২১টিতে। এছাড়া নিউইয়র্ক শহরে এপ্রিল মাসে বন্দুক হামলা গত বছরের একই সময়ে ৬২টি থেকে কমে ৫৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এতে তা কমেছে প্রায় ৯.৭ শতাংশ। ধর্ষণের অভিযোগ কমেছে প্রায় ৫৫.২ শতাংশ।
এনওয়াইপিডির আর এক তথ্য বলেছে, নিউইয়র্ক শহরের পাঁচটি বুরোতেই এ সময় সামগ্রীক গুরুতর অপরাধের সংখ্যা কমেছে। তবে হত্যা, ডাকাতি ও চুরি বেড়েছে। এই সময়ে রাজ্যে হত্যার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪.১ শতাংশ। এছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেস্টেুরেন্ট ও বাসা-বাড়িতে ডাকাতির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১.৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে এনওয়াইপিডির এক কর্মকর্তা বলেছেন, লকডাউনের কারণে সবাই ঘরবন্দী থাকায় গুরুতর অপরাধের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকের মধ্যে চুরি করার প্রবণতা বেড়েছে।
২০২০ সালের রমজান মাস একবারেই ভিন্ন রকম গিয়েছে। ইফতার বা সাহ্রিতে বড় আয়োজন হতে দেখা যায়নি। মসজিদ বন্ধ থাকায় খতম তারাবিহের নামাজও পড়া হয়নি। ঈদ একাধারে উৎসব ও ইবাদত। এক মাস সিয়াম-সাধনা শেষে ঈদ মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জনের শিক্ষা দিয়ে থাকে।
মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার আগে আরব জাতি ‘নাইরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুটি উৎসব পালন করত। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর অশ্লীলতায় নিমজ্জিত উৎসব দুটির মূলোৎপাটন করে মুসলিমদের জন্য চালু করেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা নামে দুটি উৎসব। মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তখন থেকেই শুরু হয় ঈদ উৎসব পালনের প্রচলন। ঈদ হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা ধনী-গরীব নির্বিশেষে একই কাতারে দাঁড়িয়েছে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করে। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে ঈদগাহ ও মসজিদ বন্ধ থাকায় এবার নামাজ ও স্বাস্থ্যগত বিধিনিষেধের কারণে কোলাকুলিও হয়নি। বিভিন্ন দেশে লকডাউন থাকায় বন্ধ রয়েছে মার্কেট ও শপিংমল। তবে মুসলিমরা এমন সাদামাটা ও একঘেঁয়ে ঈদ আর কখনো পালন করেছে কি-না জানা নেই। বৈশ্বিক এই মহামারি লন্ডভন্ড করেছে পুরো পৃথিবী। যার ফলে ঘরে ঘরে বিরাজ করছে বিষাদের ছায়া। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজকর্ম বন্ধ থাকায় অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
ঠিক একইভাবে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুসলমানরা আরো এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তা হলো হজ্ব ২০২০ সালে বাতিল করা হয়েছে। কারণ করোনা। একটি সংক্রামক রোগ। যার নাম কোভিড-১৯। যার কোন সুনিশ্চিত চিকিৎসা এখনো মানুষের হাতে নেই। নেই কোন ভ্যাকসিন। তবে মানুষ একের প্রতি অন্যের আবেগটি তার স্পর্শের মাধ্যমেই প্রকাশ করে। মুখ ও চোখের ভাষা যা করতে পারে না তাই করতে পারে স্পর্শ। তাই স্পর্শ এত মূল্যবান। কিন্তু এবার তো স্পর্শের ওপরই সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ এক অভিনব বাস্তবতা। তার প্রেক্ষিতে হারাম শরিফের ওয়েব সাইট, মিডল ইস্ট আই, টিআরটি দ্য নিউ আরব এর তথ্যানুসারে যুগে যুগে হজ্ব স্থগিত করার ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।
প্রথমবার হজ্ব বাতিল করা হয়েছিল ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে। আব্বাসীয়দের সময় ইসমাঈল বিন ইউসুফের মক্কা আক্রমণের কারণে। এরপর বন্ধ হয়েছিল ৯৩০ সালে। কট্টর শিয়া গ্রæপ কারমাতিদের আক্রমণে সে বছর ৩০,০০০ হাজি শহীদ হয়েছিল। তারা হাজিদেরকে হত্যা করে তাদের লাশ জমজম কুপে ফেলে দিয়েছিল। ফিরে যাবার সময় তারা সাথে করে হাজরে আসওয়াদ বাহরাইনে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে হাজরে আসওয়াদ পূনরুদ্ধার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এক দশক হজ্ব বন্ধ ছিল। তাছাড়া ৯৮৩ থেকে ৯৯০ সাল পর্যন্ত হজ্ব বাতিল হয়েছিল রাজনীতির কারণে। ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফত এবং মিশর ভিত্তিক ফাতেমীয় খিলাফতের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে সেবার ৮ বছর পর্যন্ত হজ্ব বন্ধ ছিল। শুধু যুদ্ধ বিগ্রহ না, মহামারীর কারণেও হজ্ব বাতিল হয়েছিল। প্রথমে ১৮১৪ সালে হেজাজ প্রদেশে প্লেগের কারণে ৮,০০০ মানুষ মারা যাওয়ায় হজ বাতিল করা হয়েছিল। এরপর ১৮৩১ সালে ভরত থেকে যাওয়া হজ্ব যাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে এবং চারভাগের তিনভাগ হাজি মৃত্যুবরণ করেন। ফলে সে বছর হজ্ব বাতিল করা করা হয়। এছাড়াও ১৮৩৭ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে প্লেগ এবং কলেরার কারণে তিনবারে মোট ৭ বছর হজ্ব বন্ধ ছিল। ইসলাম অবাস্তব কোন ধর্ম নয়। এলিয়েনদের জন্য আসা কোন ধর্মও নয়। তাছাড়া মানুষের সাধ্যের বাইরে এখানে কিছু করতেও বলা হয়নি। যেহেতু মানুষের কল্যাণের জন্যই ধর্ম তাই প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম হতেই পারে। এমনটাই বলেছেন ইসলামিক চিন্তাবিদরা।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাস সনাক্তে এবার বড় সাফল্যের দাবি করলেন গবেষকরা। এক মিনিটেরও কম সময়ে নিঃশ্বাসের পরীক্ষায় ভাইরাস সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন যুক্তরাজ্যের লিকেস্টার লগবরো ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগ সনাক্তের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তারা। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে তাদের কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্থ হয় এবং এই ভাইরাস এখন আবার নতুন রূপ নিয়ে আসায় গবেষকরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।
গত বছরের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী হানা দেয়া করোনার ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। প্রাণহানির মতো ঘটনার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আর্থিকখাতে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) ভাটা পড়েছে। ইতিমধ্যে ২০২০ সালের (কিউ-১) এর এফডিআই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, দেশে এফডিআইয়ের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যেখানে ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিক ছিল ১০৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এই হিসেবে এক বছরে এফডিআই কমেছে ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
সম্প্রতি জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের (ইউএনসিটিএডি) সর্বশেষ গেøাবাল ইনভেসমেন্ট ট্রেন্ডস মনিটরের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনেও করোনায় বিশ্বব্যাপি এফডিআই কমে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষণা করায় চলমান বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর গতি কমে যায়। এতে বহুজাতিক উদ্যোগ নেওয়া প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাধাগ্রস্থ হয়।
বাতাসে শীতের আগমনী বার্তা। গরমের যাই যাই অবস্থা। শীত চলে এসেছে। এই শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে নানা দেশে করোনা আবার ভয়াবহ রূপে ঝেঁকে বসেছে। সেই যে এসেছে তার আর যাওয়ার নাম নেই। বরং কোথাও কোথাও নতুন করে লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়েও তার মৃত্যুক্ষুধা মিটছে না। তবে মানুষ হারে না। মানুষ পরাজিত হলে আজ আমরা এই সভ্যতা, বিজ্ঞানের এই আশির্বাদ লাভ করতে পারতাম না। মানুষ করোনাকে বশে আনতে না পারলেও করোনাকে খুব প্রশ্রয় দিয়ে আগের মতো ঘরে বন্দী হয়ে বসেও থাকছে না। তাই তো করোনায় কার্যপ্রতিষেধক বের করতে না পারলেও করোনা প্রতিরোধে নানা কৌশল নিয়ে মানুষ যার যার মতো জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে রাজনীতি, অর্থনীতি সমাজনীতি সবই চলছে। ভার্চ্যুয়াল, রিয়াল সব পথই মানুষের আয়ত্তে। জীবনের চাহিদাই জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার পথ চেনায়। সেই পথ ধরেই মানুষ করোনা সংকট মোকাবেলা করে জীবন বাঁচানোর পথ খুঁজে নিচ্ছে। চারদিকে যেমন শোকের ¯্রােত, জীবনের বাঁকে বাঁকে আনন্দ-বিনোদনেরও নানা আয়োজন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানুষ এখন উন্মুখভাবে তাকিয়ে আছে, ভ্যাকসিনের দিকে। সবারই ধারণা, ভ্যাকসিন এলেই করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর পুরো পৃথিবী স্বাভাবিক গতি পাবে। তবে দিন আর বেশি দূরে নেই। বাংলাদেশের মানুষতো আরো এক ধাপ এগিয়ে। তাদের ধারণা এই সামনের মাসেই ভ্যাকসিন এসে যাবে। মহামারী তখন বন্দী হয়ে পড়বে। আর করোনা ভাইরাসও থাকবে না।
সবার আগে রাশিয়া ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিল। ওই ভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরকারের অনুমোদন পেয়েছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। এটি সফল হলে প্রথমেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হবে। এরপর ভারতকে। তবে চীনের তৈরি ভ্যাকসিন প্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সহজ হবে এবং মূল্যও কম। কিন্তুসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেও কী কারণে ওই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হলো না তা অজানা। তাছাড়া পাকিস্তান ভারত, জামার্নি, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের হিসাব অনুসারে বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত ২০২ টি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটা তো বৈজ্ঞানিক ব্যাপার। রাজনীতির ব্যাপার নয়। একটা ভ্যাকসিন বৈজ্ঞানিকভাবে সব পদ্ধতি মেনেই করা হয়। তবে ডব্লিউএইচও বলছে, ২৭টি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে। তবে সাধারণত প্রথম ব্যবহার যোগ্য ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মাধ্যমেই বিতরণ করা হবে। একটি নির্দিষ্ট কিছু আয়ের নিচের দেশগুলোকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিনামূল্যে নিদির্ষ্ট সংখ্যক ভ্যাকসিন দিয়ে থাকে। এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও এই নীতি অনুসরণ করা হবে। ভ্যাকসিন তৈরির কাজে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাজ্য, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। তিন দেশের ভ্যাকসিনই পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। ভ্যাকসিন প্রস্থুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সময় সংক্ষেপ করে নিজ নিজ ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসতে শুরু করেছে এবং শুরুতেই বিভিন্ন দেশের ৩ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনটি দিতে চায়। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও।
এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩৬ লাখ ছুঁয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী বিশ্বে কারোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৮ লাখ ১২ হাজার ৫২৭ জন। আক্রান্ত ২ কোটি ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ২৩ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে ওঠেছেন ১ কোটি ৬০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৮ জন। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত ২১৫ টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয় সংখ্যার দিক থেকেই এখনও শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট প্রায় ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৩ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৩৭ জনের এবং আড়াই কোটি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে।
আরও মজার ব্যাপার হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রণোদনার ফরমূলা তৈরি করলেন, তখন ভোট ব্যাংক অর্থাৎ অশিক্ষিত ও আধা শিক্ষিত, গ্রামীণ-শ্বেতাঙ্গ জনমানুষের কথা মনেও রাখলেন না। তারপরও তিনি আশা করলেন তাদের ভোট পাবেন। তারপর কি পেলেন?
এ এক আজব দেশ। আজব তার মানুষ ও রাজনীতি। আজ দেশে গজব হয়ে অতর্কিত করোনা এসে দ্রæত ছড়িয়ে পড়লো, রাষ্ট্র, সরকার, গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থমকে দাঁড়ালো, নীতিনির্ধারকরা যখন প্রায় দিশেহারা, তখন এলোপাতাড়ি ভাবে সারা দেশে লকডাউন এলো, লকডাউন গেলো। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হলো না। আফসোসÑ না গেল মানুষ বাঁচানো, না গেল অর্থনীতির ধস ঠেকানো।
প্রকৃতির ভ্রুকুটি, মানুষের শঠতা, বঞ্চনা, লুণ্টন, খুন, দুর্নীতি যেমন আছে তেমন আছে জীবনের জয়গান। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ এই প্রতীতি নিয়ে মানুষ মানুষের চেতনায়, মানুষই মানুষের পাশে মার্চ ২০২০ জুন কোভিডের চুড়ান্ত উত্থানের সময়ে যারা দিন রাত মাঠে নেমে সর্বক্ষণ কাজ করতে দেখেছি তারা হলেন, মোহাম্মদ সামাদ মিয়া জাকের, সভাপতি বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রন্স, ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার ও সামাদের সহধর্মীনী সালমা আক্তার চৌধুরী, আজিজুর রহমান বুরহান, সভাপতি গণদাবি পরিষদ, ইউএসএ, দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী, সভাপতি সিলেট সদর সমিতি, ইউএসএ, মঞ্জুর চৌধুরী জগলুল, সহ সভাপতি জালালাবাদ এসোসিয়েশন, ইউএসএ, মো. রেজউল করিম রেজু, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এম.সি,এন্ড গভ: কলেজ এলামনাই এসোসিয়েশন, ইউএসএ। তবে বিশেষ করে সামাদ মিয়া জাকের করোনায় নিজের জীবনকে বাজি রেখে ঘরে ঘরে গিয়ে ওষুধ, মাস্ক, গ্লাভস ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের সভাপতি সামাদকে যারা সহযোগিতা করেছেন সোসাইটির সাবেক সভাপতি শাহেদ আহমদ, উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি মো. শামীম মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহমেদ, সদস্য, মোহম্মদ আলী রাজা এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক এমরান আলী। কোভিড-১৯ এ জীবনকে বাজি রেখে যারা কাজ করেছেন তাদের মূল্যায়ন করা কী উচিৎ নয়? তবে সময় তাদের মূল্যায়ন করবে কোন এক দিন।
ইদানিং করোনা ভাইরাস আবার নতুন ধরণ নিয়ে আসছে এবং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য সরকারী পর্যায়ের সতর্কতা ও প্রস্তুতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও সচেতনতা ও সতর্কতা প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রগুলোতে সচেতনতা বাড়ানোর বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা আরও বাড়াতে হবে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে সচেতনতার বিকল্প নেই।
তবে যতদিন করোনা ভাইরাসের কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কার না হচ্ছে তত দিন ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। চিকিৎসকেরা অবশ্য এ সতর্কবার্তাও দিচ্ছেন যে করোনা আক্রান্ত রোগীরদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ এবং হার্ট, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শঙ্কা অধিক থাকলেও সাধারণভাবে সতর্কভাবে চলাফেরাই আপাতত প্রধান প্রতিরোধক।
মানুষের চেয়ে বড় শক্তি কিছুই নেই। এটাই পরম সত্য। তাই মানুষের কাছে একদিন করোনা ভাইরাস পরাজিত হবেই। সেই প্রত্যাশা নিয়েই এখন এই মরণঘাতী ভাইরাসের মোকাবেলা করে যেতে হবে। মানুষের সকল প্রয়াস, মেধা, পরিকল্পনা উদ্ভাবন, আবিষ্কার হোক মানবকল্যাণে বিশ্বশান্তি ও সভ্যতা রক্ষায়। তাছাড়া নতুন করে এই ধরণের ভাইরাসের উৎপত্তি ও ছড়িয়ে পড়া নিয়ে মানুষের ভাবনা ও গবেষণা অতি জরুরী এক বিষয়। একই ভাবে মানুষ নিজে থেকে এ ভাইরাস মোকাবেলায় মানুষের কর্মকান্ডের ফলে এ বিপদ এসেছে পৃথিবীতে। আর নিজেদের নৈতিক শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর সমাধান আসতে পারে। এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীর গভীর ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।
(লেখক : অধ্যাপক ম. আমিনুল হক চুন্নু। গবেষক ও কলাম লেখক। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সিলেট, পি-এইচ,ডি ফেলো।)