গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় অবিচারের শিকার: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০০:১৩
গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় অবিচারের শিকার হয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, সরকারি চিকিৎসকেরা গ্রামে গিয়ে সেবা দিতে ‘অনিহা’ প্রকাশ করেন।
শনিবার ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার (ইএসসি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের ত্রুটি বিশ্লেষণ: ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার দুঃখ হয়, মেডিকেল প্রফেশন থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষের সেবার জন্য আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম, ওই ধরনের সহায়তা আমরা পাইনি। এতটা অবিচারের শিকার হওয়ার কথা তাদের ছিল না। সাধারণ মানুষের অর্থেই গত ৫০ বছরে আমরা বিশাল বড় অবকাঠামো গড়ে তুলেছি।
দেশের সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে যাদের গ্রামে বা মফস্বলে পাঠানো হয়, তাদের নিয়মিত কর্মস্থলে না থাকার আভিযোগ অনেক পুরনো। শহুরে সুযোগ সুবিধা না পাওয়া কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কম থাকার কারণে অনেকেই মাসের পুরো সময় উপজেলা পর্যায়ে নিজের কর্মস্থলে থাকতে চান না। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
পরিকল্পনান্ত্রী বলেন, হয়ত অন্তর্নিহিত বড় কোনো বাধা আছে, না হলে কেন সরকার আমাদের সামান্য সম্পদ থেকে একের পর এক নানা ধরনের ইনসেনটিভ দিচ্ছে। তারপরও তাদের (চিকিৎসকদের) গ্রামে রাখতে পারছি না। গ্রামের দিকে উনারা যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।
নিজের চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমি যখন আমলা ছিলাম তখন আমি মাঠে ময়দানে কাজ করেছি। এখন চিকিৎসার অবকাঠামো আছে, কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। এটাকে ঠিক কীভাবে বর্ণনা করব আমার জানা নেই।
নিজের এক ছেলেও যে চিকিৎসা পেশায় আছেন, সে কথা জানিয়ে মন্ত্রী মান্নান আরও বলেন, তাদের সবার প্রতি সম্মান রেখেই আমি কথাটা বলছি।
এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর টেস্টের অবকাঠামো, যেটা করতে ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগত, সেই কাজ আমরা মাত্র ২৪ ঘণ্টায় করে আড়াই হাজার কোটি টাকার সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করে দিয়েছি।… ডাক্তারদের এসব কর্মকাণ্ড নাগরিকদের পীড়া দেয়। কোভিড-১৯ সংক্রমণকেও ‘দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে’ নিয়ে আসতে উন্নত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ‘ভালো করেছে’।
বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে বাংলাদেশে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য মান’ অর্জন করার আশাবাদের কথাও তিনি বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তৌফিক জোয়ারদার দেশের জনস্বাস্থ্য বিভাগে ‘দক্ষ কর্মীর’ অভাব থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে ‘যথার্থ পেশাদার পথে দক্ষ লোক’ নিয়োগের জন্য সরকারি চাকরিতে ‘পাবলিক হেলথ সেক্টরে’ আলাদাভাবে নিয়োগ শুরুর সুপারিশ করেন তিনি।
প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের যা সম্পদ আছে, তা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে।
হাওর অঞ্চলের চিত্র তুলে ধরে তিনি সম্পদ বণ্টন ও ব্যবহারে বিরাজমান বৈষম্য কমিয়ে আনার তাগিদ দেন।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, দেশের ১৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষের যথার্থ সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সেজন্য স্বাস্থ্য খাতের জন্য মহাপরিকল্পনা করে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।