সুন্দরবনের মালিকানা দাবি করে ‘নব্য জমিদারের’ সাইনবোর্ড!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২০, ১২:১৬:৩১
১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশের মাধ্যমে দেশ থেকে জমিদারি প্রথা বিদায় নেয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের সব সম্পদের মালিকানা সরকারের। তবে, ১৯৫৬ সালের সংশোধনী গেজেট অনুযায়ী তৎকালীন খুলনা জেলার অধীন সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা জেলায় অবস্থিত সুন্দরবনের সকল জমি “সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব” এস্টেটের সম্পত্তি এবং এর মালিক দাবি করেছেন এক ব্যক্তি। এ জন্য তিনি রীতিমত অফিস খুলে মাইকিং করে সবাইকে প্রজা বানিয়ে তার আনুগত্য স্বীকার, জমি বন্দোবস্ত নেওয়া এবং তাকে খাজনা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাগেরহাটেরর মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাড়ইখালীর বাসিন্দার আকবর আলী হাওলাদারের ছেলে আব্দুস সামাদ হাওলাদার শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের সকল জমি নিজের বলে দাবি জমিদারি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুস সামাদ হাওলাদার প্রাদেশিক সরকারের ১৯২৮ সালের ৮ বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী এস এ (চলমান) ও বি আর এস (সংশোধনী) প্রাদেশিক সরকারের খাস রেকর্ড অনুযায়ী সুন্দরবন লর্ড চিরস্থায়ী প্রজাস্বত্ব এস্টেট কবলা সূত্রে নিজেকে সুন্দরবনের মালিক ঘোষণা করেন।
ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে তিনি বাড়ইখালির নিজ বাড়িতে সদর দপ্তর স্থাপন এবং গত ২৪ তারিখ শরণখোলা উপজেলার পাঁচ রাস্তার মোড় এলাকায় একটি অফিস নিয়ে তাতে সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এরপর এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে টাকা পয়সা আদায় এবং খতিয়ান খুলে জমির পর্চা ও দাখিলা নিতে বলেন। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমীন হাওলাদার অভিযোগ করে জানান, শরণখোলায় আব্দুস সামাদ বেশ কিছু এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মুক্তা মুন্সি, মোজাম্মেল হোসেন, গোলাম রাব্বি, মাছের খাল পাড়ের লাইলি বেগম, উত্তর রাজাপুর গ্রামের আজিজ হাওলাদার, রহমান খান, লাকুড়তলার রেকসোনা বেগম, খাদা গ্রামের মাহামুদা বেগম তার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন খান জানান, ইতোমধ্যে তার এলাকার মতিয়ার হাওলাদার ও পান্না ঘরামীর জমি চাষে বাঁধা প্রদান করেছে আব্দুস সামাদ হাওলাদারের এজেন্টরা।খোন্তাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজু সরদার জানান, আব্দুস সামাদ তার এস্টেটের সদস্য হওয়ার জন্য দুই হাজার টাকা দাবি করেন এবং এরপর থেকে তার কাছে জমির খাজনা দিতে বলেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্ছু জানান, আব্দুস সামাদের পিতা আগে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার পুত্র এখন নিজেকে জমিদার দাবি ও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ বাণিজ্য শুরু করেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের মালিক দাবিদার আব্দুস সামাদ হাওলাদার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “জমিদারি আমলের কাগজপত্র ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এ অঞ্চলের জমির মালিক আমি। আমার কাছ থেকে সবার নতুন করে জমি বন্দোবস্ত নিতে হবে।
এদিকে, গত বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার সকল জমির মালিক দাবি করে স্থাপিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের শরণখোলা অফিসে তালা লাগিয়ে দেন শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিন। এ সময় ওই অফিসের সাইনর্বোড, ব্যানার অপসরণ করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের নামে সে বাংলাদেশকে অস্বীকার করছে। বাংলাদেশে এখন আর কোনো জমিদারি প্রথা নেই, সকল জমির মালিক সরকার। তাই খবর পেয়ে তাদের অফিস বন্ধ করে সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। শরণখোলায় এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে কেউ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলে তাকে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।