করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে যে মহামারি দেখা দিয়েছে তা থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় তিনি বলেন, যতদিন না কোনও প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হচ্ছে, ততদিন করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। এরমধ্যেই জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রবিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হয়। সব বেসরকারি বেতার, টেলিভিশন ও স্যোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
করোনা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসের এই মহামারি সহসা দূর হবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। যতদিন না কোন প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হচ্ছে, ততদিন করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ইতোমধ্যে লকডাইন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের তো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তো নয়ই।
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে সারা বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। অগণিত মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও এই মহামারি মানুষের রুটি-রুজির ওপর চরম আঘাত হেনেছে। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য জরুরি কিছু সেবা ছাড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। হারিয়েছেন তাঁদের রুটি-রুজির সংস্থান। এসব কর্মহীন মানুষের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালকেও আমরা করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করেছি। জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার ডাক্তার এবং ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। হাসপাতালগুলোতে সকল ধরনের রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলোর কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরায় সচল করতে আমরা ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি-যা জিডিপির তিন দশমিক ৬ শতাংশ। রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, কৃষি, মৎস্যচাষ, হাঁসমুরগি ও পশুপালন খাতসহ ১৮টি অর্থনৈতিক খাতকে এসব প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়েছে। কাজ হারানো যুবক ও প্রবাসী ভাইবোনদের সহায়তার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি টাকা করে সর্বমোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা কার্যকর করা হয়েছে। যারা কাজে যোগ দিতে পারেননি, তারাও শতকরা ৬০ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বেতনভাতা পরিশোধ করা শুরু হয়েছে।
দোকান-পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে মালিকদের আয় যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনি কর্মচারীরাও বিপাকে পড়েছেন। বেশিরভাগ দোকান মালিকের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।