প্রকৃতির সৌন্দর্য দৃষ্টিনন্দন নাগলিঙ্গম ফুল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮:৩০:১৬
নাগলিঙ্গম একটি দুর্লভ বৃক্ষ। এর ফুল বেশ আকর্ষণীয়, মনোরম। অদ্ভুত সুন্দর এ ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। ধারণা করা হয়, এ কারণেই এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম।
বাংলাদেশে প্রায় ১০০ নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে। এর মধ্যে একটি রয়েছে রাজশাহী শাহ মখদুম কলেজ। প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে রাজশাহী শাহ মখদুম কলেজ প্রাঙ্গণে দৃষ্টিনন্দন নাগলিঙ্গম গাছের গোড়া ফুঁড়ে বের হওয়া হাজারও ফুল। লম্বা লতার মতো ছোট ছোট হাজারও কুঁড়ি থেকে নাগলিঙ্গমের ফুল ও গোলাকার ফল বের হয়েছে।
নাগলিঙ্গম বা হাতির জোলাপ গাছের ইংরেজি নাম ‘cannonball tree’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, যা Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। দুই-তিন হাজার বছর ধরে ভারতে জন্মানোর কারণে অনেকে এ বৃক্ষটির উৎপত্তিস্থল ভারতকেও বিবেচনা করে থাকেন।
নাগলিঙ্গমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পরাগচক্র সাপের ফণার মতো বাঁকানো এবং উদ্যত ভঙ্গি। রাতের বেলায় ফুল থেকে তীব্র সুগন্ধ বের হয় যা সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। সারা গ্রীষ্মকাল ধরেই নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে।
নাগলিঙ্গম ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮-৩১ সেন্টিমিটার, কিন্তু ৫৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বায় পৌঁছতে পারে। পাতার রং সবুজ, প্রায় কালো কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। গ্রীষ্মকালে এদের পত্র মোচন হয়।
এ বৃক্ষ বহু শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট এবং বড় বড় ডালে ফুলের মঞ্জুরি ধরে। কখনো কখনো সরা বৃক্ষের কাণ্ড থেকেই ফুল বের হয়। ফুলগুলো কমলা, উজ্জ্বল লাল গোলাপি রঙের, ঊর্ধ্বমুখী, ছয়টি পাপড়িযুক্ত এবং তিন মিটার দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ফুটে থাকে। একটি বৃক্ষে প্রায় এক হাজারটি ফুল ধরতে পারে। ফুল দৈর্ঘ্যে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাপড়ি গোলাকৃতি, বাঁকানো, মাংসল এবং ভেতর ও বাইরে যথাক্রমে গাঢ় গোলাপী ও পাণ্ডুর হলুদ। ফল ক্যানন বলের মত অর্থাৎ দীর্ঘ, গোলাকার, ভারি এবং ২৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। নয় মাসের মধ্যে ফল পরিপক্ক হয়। ফল মাটিতে পড়লে মৃদু শব্দে ফল ফেটে যায় এবং বাতাসে ঝাঁজালো গন্ধের সৃষ্টি করে। ফলগুলো কখনো কখনো পরিপক্ব হতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ফলগুলো গাছের মতো শক্ত। প্রতিটি ফল থেকে প্রায় ৬৫টি বীজ পাওয়া যায়। বীজগুলোতে আলাদা আলাদা ফুলের মতো আস্তরণ থাকে, যা এদের প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। পচা ফলের গন্ধ অত্যন্ত উগ্র, কুৎসিত। বীজ থেকে সহজেই এ বৃক্ষেও চারা জন্মে।
বাংলাদেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় (সেগুনবাগিচা, ঢাকা), পিজি হসপিটাল সি ব্লগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মহাখালী ডিওএইচএস, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর রায়সাহেব বাড়ি লোকনাথ বাবা মন্দির, বিক্রমপুর অর্থাৎ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে জমিদার সাহেব বাবুর দীঘির পাশে, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, টঙ্গী, শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (BMTTI) গাজীপুর, ঢাকা; বরিশালের বিএম কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, নওগাঁ জেলার হাট নওগাঁ ঈদগা মাঠ, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ভাটিয়ারী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এণ্ড কলেজ, শাহ মখদুম কলেজ, রাজশাহী, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, অযাচক আশ্রম-বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কার্যালয় রহিমপুর মুরাদনগর কুমিল্লা, চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবন, শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বগুড়া, কুমিল্লা জাতীয় ঈদগাঁ, গাজীপুরের ভাওয়াল রাজার বাড়ি (বর্তমানে ডিসি অফিস), একমি ল্যাবরেটরি, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলাস্থ জয়াগ নামক গ্রামে গান্ধী আশ্রমে এবং ধামরাইসহ সারা দেশে অনধিক ১০০টি গাছ রয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত এই উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। দক্ষিণ আমেরিকায় এ বৃক্ষের কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। তবে সুগন্ধী ফুলের গাছ হিসেবে বাগানে বা বাড়ির আঙিনায় রোপণ করা হয়।