চা শ্রমিকদের অধিকারসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০২৫, ১:৪৯:০৮
চা শ্রমিকদের অধিকারসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গোল টেবিল বৈঠক করেছে এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো)। বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চা বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষ, সাধারণ চা শ্রমিক, পঞ্চায়েত সদস্য, ভ্যালি সদস্য, এনজিও প্রতিনিধি, ইউপি সদস্য ও চা বাগান যুব কমিটি সদস্যবৃন্দ।
বুধবার (৯ জুলাই) বেলা ১২টায় সিলেট নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে চা বাগানের শ্রমিকদের জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি নারী চা শ্রমিকরা বাগানে কাজ করতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বৈঠকে চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে ও অধিকার বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারী সকলে বিভিন্ন সুপারিশ করেন।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, আমরা কেউই চাই না চা শিল্প ধ্বংস হোক। চা শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সবার আগে চা শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ বাগান টিকে আছে চা শ্রমিকদের জন্য। শ্রম আইনে নারী চা শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে। এবং এই সুবিধা ভোগ করা সকল নারী চা শ্রমিকদের অধিকার। পাশাপাশি অবহেলিত এই চা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করেন বক্তারা।
একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র সহকারী জজ ও সিলেট জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার বিশেশ্বর সিংহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন। বৈঠকের শুরুতেই সিলেটের চা বাগানের চিত্র তুলে ধরেন একডো’র প্রকল্প সমন্বয়কারী মোমতাহিনুর রহমান চৌধুরী।
আয়োজকরা জানান, নারী চা-শ্রমিকদের নেতৃত্ব বিকাশের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ই.ইউ) ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় একডো কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘লিডারশীপ ডেভেলপমেন্ট ফর টি গার্ডেন উইমেন ওয়ার্কারস অন দেয়্যার রাইটস’ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী চা-শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা যেন তাদের অধিকার আদায় করতে পারেন সেজন্য তাদেরকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সাথে পরিচয়, বিভিন্ন সরকারি সেবা সম্পর্কে অবগত করা হয়।
বৈঠকে লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, চা শ্রমিকদের যেমন বেতন বকেয়া আছে তেমনি আমিসহ ম্যানেজমেন্টে কাজ করা সবারেই বেতন বকেয়া আছে। একদিকে চা নিলাম হচ্ছে না। অন্যদিকে নিলাম হলেও যে টাকা পাওয়া যায় সেটা দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা লোনের জন্য আবেদন করেছি সেটাও পাচ্ছি না। তাই একটু সংকট যাচ্ছে। হয়তো কিছুদিনপর এই সংকট কেটে যাবে। আস্তে আস্তে তাদের সব সমস্যার সমাধান হবে। তাই শ্রমিকদের একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। কারণ বাগানের সব কিছুই শ্রমিকদের। বাগান রক্ষা করার দায়িত্ব তাদের।
প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র সহকারী জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার বিশেশ্বর সিংহ বলেন, আজকে আপনার যে দাবীগুলো তুলেছেন শ্রম আইনে সেগুলো পাওয়ার অধিকার আপনাদের আছে। শ্রম আইনে একজন নারী শ্রমিকরে জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া আছে। সমান মজুরি, কাজের জায়গায় টয়লেটের ব্যবস্থা, প্রসূতি কালীন সুবিধা, শিশুদের যত্ন, ভারী ও বিপদজনক কাজ না করার জন্য আইনে বলা আছে। নারী চা শ্রমিকদের এসব সুবিধা নিশ্চিত করা বাগান মালিকদের দায়িত্ব।
একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ বলেন, আমরা প্রকল্প শুরু করার আগে জরিপ করে আগে চা শ্রমিকদের সমস্যা নির্ধারণ করেছি। এরপর আমরা নীতিনির্ধারকদের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি। নারী চা-শ্রমিকদের নেতৃত্ব বিকাশে বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করেছি। বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে সচেতনতামূলক নাটক, উঠান বৈঠকসহ নানা কার্যক্রম করেছি। এখন আবারও আমরা সবার সুপারিশ নিচ্ছি। যেন চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে সবাই এগিয়ে আসতে পারেন।