সিলেটে বাড়ছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২৫, ৯:৪২:২০
সিলেটে ভারি বর্ষণ কিছুটা কমলেও সীমান্তবর্তী ভারতের পাহাড়ি ঢল থামেনি। ফলে নদনদীর পানি কমার বদলে আরও বাড়ছে। জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি এখনো বিপত্সীমার উপরে রয়েছে।
শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের অভ্যন্তরীণ রাস্তা দেবে সৃষ্টি হয়েছে বড় ফাটলের। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা : সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর ও কানাইঘাটের অনেক গ্রামে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও বাজার। জকিগঞ্জ পৌরসভার কিছু এলাকা, সদর ইউনিয়নের রারাই ও বাখরশাল গ্রাম এবং খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্রবেশ করা পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার উপরে রয়েছে। শেওলায় পানি আছে ১৩.৫২ মিটার উচ্চতায়, যা বিপত্সীমার ০.৪৭ মিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জে ৯.৯৮ মিটার, যা ০.৫৩ মিটার উপরে। কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি ১৩.৬৯ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপত্সীমার ০.৯৪ মিটার উপরে। এর মধ্যে অমলশিদে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। এখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপত্সীমার ১.৯৬ মিটার উপর দিয়ে।
ধলাই, লোভা, সারি, ডাউকিসহ সব নদীর পানি বাড়ছে। শুধু সারি গোয়াইন নদীতে সামান্য কমতে দেখা গেছে। উপজেলাগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিয়ানীবাজারে খোলা হয়েছে ৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র, ওসমানীনগরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৩টি কেন্দ্র। ইতোমধ্যে দয়ামীর ইউনিয়নের একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে তিনটি পরিবার। মজুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, চাল ও ওষুধ। কাজ করছে মেডিকেল টিম ও স্থানীয় প্রশাসন। ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বাড়িঘরের আঙিনা ও সড়কে পানি উঠে গেছে। সুনামগঞ্জেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নদনদীতে পানি বাড়ছে। জগন্নাথপুরে নদীর পানি ঢুকে সড়ক ধসে পড়েছে, যান চলাচল বন্ধ। পাইলগাঁও ইউনিয়নের অলইতলী গ্রামের সড়ক ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি। বেগমপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোও ঝুঁকির মধ্যে। বিয়ানীবাজার উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন পানির নিচে।
শেরপুর উত্তর : নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। উজানের বিভিন্ন নদনদী, সোমেশ্বরী মহারশি, ভোগাইসহ নদীর পানি রাত থেকে বৃষ্টি হওয়ার ফলে কিছুটা বাড়লেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর পানি বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দেশের সর্ববৃহতৎ প্রাকৃতিক ঝরনা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কের অভ্যন্তরীণ রাস্তার বিভিন্ন স্থান দেবে গিয়ে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। এতে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পর্যটকরা।
আখাউড়া (ব্রহ্মণবাড়িয়া) : আখাউড়া উপজেলা সীমান্তবর্তী তিনটি ইউনিয়নে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বাড়িঘর, খালবিল ও নদনদীর পানি কমতে শুরু করায় স্থানীয় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। বানভাসিরা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে দিয়ে নিজ গৃহে ফিরে যাচ্ছে। তবে বন্যার পানি নেমে গেলেও রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।