সমঝোতা চুক্তি সই
চট্টগ্রামে দেশের প্রথম মনোরেল
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২৫, ২:৪১:১০
চট্টগ্রাম নগরীতে চালু হচ্ছে দেশের প্রথম মনোরেল। প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে বন্দরনগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা। যানজট কমে আসবে, বাড়বে যাতায়াতে গতি ও পরিবেশবান্ধব আধুনিকতার ছোঁয়া। শুধু তাই নয় চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হিসেবে গড়ে তোলার পথ তৈরি করবে এই মনোরেল। সবকিছু ঠিক থাকলে
আগামী দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই মনোরেল চালু হতে পারে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে মনোরেল বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং বিদেশি দুটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
চসিক সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার। প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে বাস্তবায়ন হবে। বিনিয়োগ আসবে এনএএস ইনভেস্টমেন্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইজিপ্টের মাধ্যমে। এতে বিনিয়োগ হবে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। পুরো অর্থায়ন আসবে মিশরের ওরাসকম কনস্ট্রাকশন এবং জার্মানির আরব কন্ট্রাক্টরস গ্রুপ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
আরও জানা যায়, মনোরেল প্রকল্পের আওতায় তিনটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো লাইন-১: কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর। পথে পড়বে বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা। লাইন-২: সিটি গেট থেকে শহীদ বাশিরুজ্জামান স্কয়ার। এ কে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে যাবে। লাইন-৩: অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার। মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালি হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার অনেকদিনের ভাবনা ছিল—এই শহরটাকে কীভাবে পরিকল্পিত করা যায়। কীভাবে ট্রাফিক জ্যাম কমানো যায়। অনেক উদ্যোগের পাশাপাশি আমি বিশ্বাস করি, মনোরেল এই সমস্যাগুলোর একটি কার্যকর ও টেকসই সমাধান হবে।’
মেয়র বলেন, ‘এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য চসিকের কোনো অর্থ ব্যয় হবে না। আমরা শুধু ভূমি বরাদ্দ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেব। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই মনোরেল চালু করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, “এই মনোরেল শুধু যানজট কমাবে না। এটি নগরবাসীর জীবনে শৃঙ্খলা আনবে। নগরী হবে একটি পর্যটন ও ব্যবসাবান্ধব শহর। আমরা চাই, চট্টগ্রাম হোক ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ কাঠামোর আদর্শ উদাহরণ।”
অনুষ্ঠানে আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, ‘মনোরেল থেকে রাজস্ব শুধু টিকিট বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং স্টেশনে দোকানপাট, বিজ্ঞাপন, আশপাশের সম্পত্তিমূল্য বৃদ্ধি ও আয় বাড়াবে। আন্তর্জাতিকভাবে দেখা গেছে, ভালো গণপরিবহন ব্যবস্থা থেকে ৫ থেকে ৭ গুণ পর্যন্ত অর্থনৈতিক রিটার্ন পাওয়া যায়।’
অনুষ্ঠানে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করব। মনোরেল চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে।’