সরকারের পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন: তারেক রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৫, ৯:৪০:২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকার যে ধরনেরই হোক না কেন, তা যেন জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক হয় এবং তাদের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা জরুরি।
রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “দেশের জনগণ কোনো সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকারকে অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে হবে, তাদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে। এখানে সরকারের মান-অভিমান কিংবা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক বা রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও এটি জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সেই কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, কর্মপরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।”
তারেক রহমান বলেন, “নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার—সরকারের যেকোনো কাঠামোতেই জনগণের প্রতি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে, ক্ষমতাসীনরা নিজেদের অজান্তেই স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে লিপ্ত হয়ে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্র ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী ও মৌলিক সংস্কার। এটি একবারেই শেষ হয়ে যায় না, বরং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এখানে কম-বেশি সংস্কার বলে কিছু নেই।”
পলাতক স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে না আসে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তির লক্ষ্য হওয়া উচিত ফ্যাসিবাদ রুখে দিয়ে একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।”
বাজেট নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, “চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তবে বাজেট বাস্তবায়নের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ঘাটতি বাজেট, যা প্রতিবছরই অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করে।”
তিনি বলেন, “এনবিআরের ভূমিকা বাজেট প্রণয়নে সরাসরি না থাকলেও রাজস্ব আদায়ে মুখ্য। অথচ বাজেট ঘোষণার ঠিক আগে এনবিআরের ওপর সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি করা হয়েছে, তা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ জনগণকে অন্ধকারে রেখে এগোনোর নামান্তর।”
তারেক রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যেকোনো গড়িমসি কিংবা অজুহাতকে পুঁজি করে পলাতক ও পরাজিত স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে ৫ আগস্টের মতো জাতি আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে।”
তিনি জানান, “বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। সেই নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি রয়েছে।”
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের গুণী ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠিত হবে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে মাইলফলক হয়ে থাকবে।”