হাসিনা গণমাধ্যমকে ভয়ানকভাবে ব্যবহার করেছে: প্রেস সচিব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৯:০৫
ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার গণমাধ্যমকে ভয়ানকভাবে ব্যবহার করেছে।গণমাধ্যমকে হাসিনা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আর বিদেশিদের দেখানো হয়েছে যে, এখানে এক হাজারেরও বেশি গণমাধ্যম আছে। আমরা গণমাধ্যমের সংস্কার চাই। বিগত ১৬ বছর গণমাধ্যমকে কিভাবে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, সেই বিষয়টি আমাদের সামনে উঠে এসেছে।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব : নাগরিক ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপমুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে হবে মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, আমরা চাই বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে কতগুলো গুম, খুন, আইসিটি মামলাসহ মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ভয়াবহ অন্যায় অবিচার হয়েছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে। সে সময় বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা সেই সরকারের পক্ষে কথা বলেছে। সেজন্য আমরা চাই, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যেসব অপরাধ হয়েছে, সেই অপরাধগুলো বর্তমান গণমাধ্যম দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, প্রতারণামূলক নির্বাচন হয়েছে।দেশের মানুষ এই গণমাধ্যমের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিগত সময়ে কতগুলো মানুষ গুম-খুন হয়েছে এই বিষয়গুলো কোনো গণমাধ্যম আমাদের জানায়নি বরং পুলিশের মাধ্যমে আমরা এই তথ্যগুলো পেয়েছি। তাহলে গণমাধ্যমের কি কোনো ভূমিকা নাই?
প্রেস সচিব বলেন, জুলাই আগস্টে কত লোক মারা গেল, সেই বিষয়টি নিয়েও গণমাধ্যম সঠিক তথ্য প্রচার করেনি। আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত বলেছে, মিথ্যা প্রচার করেছে। কারো নামে কোনো ঘৃণা আমরা যেন না ছড়াই, আমরা অ্যাভিডেন্স চাই। বিগত সময়ে গণমাধ্যম হেফাজতের কিলিংকে অ্যানিমেলের সঙ্গে তুলনা করেছে। এটা কি করা ঠিক হয়েছে? বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দালাল হিসেবে তাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যত রকমের প্রচারণা প্রয়োজন, তা গণমাধ্যম করেছে।
শফিকুল আলম বলেন, গণমাধ্যম বিগত সময়ে কাজগুলো অনেকাংশে করতে পারেনি। সেটি হলো বিশেষ করে ডিজিএফআইয়ের ফোনকলে তারা নত হয়ে গেছে এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। এটাও আমরা জেনেছি। ডিজিএফআই, এনএসআই, ডিবির কলে নিউজ ব্রেক করা হয়েছে।কোনো ইন্টেলিজেন্স গোয়েন্দা বিভাগ আপনাদের তথ্য যেন আটকে দিতে না পারে।সে বিষয়টি আপনাদের মনে রাখতে হবে। আমরা যারা সাংবাদিক আমাদের যেসব আইন আছে, সেগুলো আমাদের জানতে হবে। কারো অনৈতিক চাপে নিউজ প্রকাশ বন্ধ করা যাবে না- এমন হস্তক্ষেপমুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কপি পেস্টকে চুরি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কপি পেস্ট রোধ করতে হবে। কোনো গণমাধ্যমে একটি রিপোর্ট প্রচার হলে মুহূর্তের মধ্যে হাজারও অনলাইনে সেটা কপি পেস্ট করে নিউজ করা হয়। এই মেধাসত্ত্ব চুরি রোধ করতে হবে। এতে সাংবাদিকদের মূল্য বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গণমাধ্যমের মালিকদের উদ্দেশে প্রেস সচিব বলেন, গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তাদের ভালো সম্মানি দিতে হবে। তাছাড়া এটি করার দরকার নাই। বর্তমানে দেশে ফেইক নিউজের ছড়াছড়িতে পরিণত হয়েছে। এটি থেকে আমাদের সাবধান হতে হবে। একজন মেয়ের নামে একটা রিপোর্ট করে ফেললাম, অথচ সে কোনো অপরাধ করে নাই। এটা করা যাবে না। সঠিক তথ্য যাচাই না করে কারো বিরুদ্ধে লেখা যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নিউজ করার পূর্বে আপনাকে বারবার যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্য লিখতে হবে। আপনার দ্বারা যেন কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমাদের হাউসগুলোতে ডাইভারসিটি বাড়াতে হবে। এ সময় তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ হলের নামটি বিবেচনার জন্য ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির ১৩ দফা গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, গণমাধ্যমে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রোধ ও স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কমিশন গঠন, মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা, সাংবাদিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও চাকরির নিরাপত্তা, বেতন কাঠামো সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংস্কার, সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন, বাজেটে গণমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ, গণমাধ্যম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আঞ্চলিক ও বিকল্প গণমাধ্যমের উন্নয়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির সুপারিশ করেন তারা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ দূতাবাসের সেক্রেটারি (প্রেস) আকবর হোসেন, উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মাহবুব আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মোল্লা ফারুক এহসান, সাইবার অ্যাক্টিভিস্ট আব্বাস উদ্দিন নয়ন প্রমুখ।